সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে সরকারের না পারার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কেউ গলা ধাক্কা দিয়ে বলেছে নাকি যে, নির্বাচন দিতে হবে তোমাকে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে। যখন এই সরকার আসে তখন কি এ রকম কোনো শর্ত ছিল? শর্ত ছিল না। আমরাই বললাম যে, ইলেকশন হবে।’
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। মন্ত্রণালয়ের গত এক বছরের সাফল্য ও অগ্রগতি নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এই সময় উপদেষ্টা জানান, প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট কি নাÑ সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাতে রাজনৈতিক দলগুলো জানে না তারা কী করবে তাদের ভবিষ্যৎ কী? এটা কি বাংলাদেশে নতুন? তথাকথিত ওয়ান ইলেভেনের পরে হয়নি? আমরা কিন্তু এ নিয়েই বেঁচে আছি। দলগুলোর মধ্যে মুখে মুখে কথা হচ্ছে। আমরা কথা বলার জাতি, কথা না বলে থাকতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক ক্যাওয়াজ তখন বলব, যখন সরকার একদিকে আর রাজনৈতিক দলগুলো আরেকদিকে থাকবে। নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে যদি রাজনৈতিক দলের দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়, সেটাতে তো সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তাহলে সিচুয়েশনটা খারাপ কোথায়, সেটা আমি বোঝার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে একটা নির্বাচন হওয়া উচিত, নির্বাচিত সরকার আসা উচিত। ইউনিভার্সেল ডেমোক্রেটিক প্রসেসটা স্টাবলিস্ট হওয়া উচিত। গত ১৭-১৮ বছর ডেমোক্রেটিক প্রসেস স্টাবলিস্ট হতে দেখিনি। আমরা যদি সেটা করতে পারি, সেটা আমাদের বড় ক্রেডিট।’
চট্টগ্রাম বন্দরে চাঁদাবাজি বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আশ্চর্য হই যখন আপনারা (সাংবাদিক) এগুলো পত্রিকায় দেন অথচ একবারও জিজ্ঞেস করেন না যে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন কত অবৈধ টাকা ওঠে।’
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি জায়গায় চাঁদাবাজি। দিনের পর দিন ভেতরে ট্রাক দাঁড়ানো, এটা দাঁড়ানোর জায়গা না। কেউ না কেউ এখান থেকে চাঁদা নিচ্ছে। ওখান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, বাইরে গেছে, সেখান থেকে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। আপনারা নিজেরাই বলেন। যিনি চট্টগ্রামের মেয়র হন উনি চট্টগ্রামের মেয়র কম, বন্দরের রক্ষক বেশি। চট্টগ্রাম বন্দরটা হচ্ছে সোনার ডিম পাড়া মুরগির মতো। তাড়াতাড়ি এটা জবাই করে তাড়াতাড়ি বের করে খেয়ে ফেলো।’
সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, ‘প্রথমে বলা হলো অমুক চলে গেলে তো ভাই বন্দর (চট্টগ্রাম বন্দর) ডাউন হয়ে যাবে। আমি নিজেই ভয় পেয়ে গেলাম কী করব? মিটিং করলাম, বললামÑ পাঁচ শতাংশ কম হোক, সেটাতেও রাজি। যেখানে দিনের পর দিন লাগত, এখন সেখানে এক দিন থেকে দেড় দিন, তারও কম সময় লাগছে। ইফিসিয়েন্সি বাড়ছে। আপনারা ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞেস করেন না কেন।’
চট্টগ্রাম বন্দরে অবৈধভাবে কত টাকা আসেÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘আনুমানিক দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা প্রতিদিন ওঠে। আপনি বন্দরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, তারা হয়তো আরও বেশি বলবে।’
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান সম্প্রতি একটি কর্মসূচিতে বলেছিলেন, ‘তার দল ক্ষমতায় গেলে কর্মজীবী নারীদের কর্মসময় ৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৫ ঘণ্টা করবে’। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এটিকে রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে দেখছি। নারী শ্রমিকরা যদি তাদের এ কথায় ভোট দেন, তাহলে তো আমার বলার কিছু নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটাকে (জামায়াত আমিরের বক্তব্য) আপনারা (সাংবাদিক) ছাড়া কেউ সিরিয়াসলি নিয়েছে বলে তো আমার মনে হয় না। আমার কাছে এমনই মনে হয়।’

