জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ১৭ জুলাই রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় মামার বাসা থেকে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। হাসনাতের সঙ্গে আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলমকেও তার (হাসনাত) মামার বাসা থেকে তুলে নিয়েছিল ডিজিএফআই।
গতকাল মঙ্গলবার জবানবন্দিতে হাসনাত আবদুল্লাহ এ কথা বলেন। ১৭ জুলাই রাত আড়াইটা পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জানান হাসনাত আবদুল্লাহ।
গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহিদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ২২তম সাক্ষী হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ জবানবন্দি দেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই জবানবন্দি নেওয়া হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘গত বছরের ১৭ জুলাই রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় তিনি তার মামার বাসায় যান। হল বন্ধ করায় সমন্বয়ক সারজিস আলমও (এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক) তার মামার বাসায় যান। সেদিন রাতে তার মামার বাসা থেকে তাকে ও সারজিসকে উঠিয়ে নিয়ে যায় ডিজিএফআই। তারা যেতে অস্বীকৃতি জানালে পরিবারসহ তাদের ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়।’
জবানবন্দিতে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘১৭ জুলাই রাতে তাদের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় নেওয়া হয়। তাদের নিয়ে যাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে সেখানে তৎকালীন তিন মন্ত্রী আনিসুল হক, মোহাম্মদ এ আরাফাত ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ঢোকেন। ডিজিএফআইয়ের সদস্যরা তিন মন্ত্রীর সঙ্গে তাদের সভা করতে চাপ দেন। এক ঘণ্টার বেশি সময় নানাবিধ প্রলোভন, ভীতি ও চাপ দিয়ে শুধু সভা করতে বলেন। অন্য সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদের সঙ্গে কথা না বলে তারা কোনো ধরনের বৈঠক করতে অস্বীকৃতি জানান। ডিজিএফআই পীড়াপীড়ি করে তাদের বৈঠকে বসাতে ব্যর্থ হলে তিন মন্ত্রী রাষ্ট্রীয় ভবন পদ্মা থেকে বের হয়ে যান।’
বৈঠক না করায় তাদের ওপর ডিজিএফআই ক্ষুব্ধ হয় উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, ‘ডিজিএফআই তাদের বাসায় ফেরত না দিয়ে সেদিন রাতে মৎস্য ভবন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মাঝামাঝি জায়গায় সেফ হাউস নামে একটি গোপন স্থানে নেয়। তাদের যে বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল, তা বাইরে থেকে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি মনে হলেও ভেতরে ছিল আধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত।
জবানবন্দিতে হাসনাত আরও জানান, গত বছরের ১৮ জুলাই ভোরে (ফজরের আজানের সময়) ডিজিএফআইয়ের একজন সেনা কর্মকর্তা তাঁকে বলেন, তিনি (ওই কর্মকর্তা) ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর বিএনপির লাখো জনতার সমাবেশ ১০ মিনিটে নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন। তাদের আন্দোলনও একইভাবে নষ্ট করতে তার সময় লাগবে না।
হাসনাত জানান, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় তারা অন্য সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। ডিজিএফআইয়ের সদস্যরা তাদের মুঠোফোন ব্যবহার করে সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের (সমন্বয়ক) অবস্থা নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তার (হাসনাত) ফোন দিয়ে সমন্বয়ক হাসিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। মুঠোফোনে তিনি হাসিবের অবস্থান জানতে চান। হাসিব জানান, তিনি চানখাঁরপুল এলাকার আন্দোলনে আছেন। ডিজিএফআই তাকে চানখাঁরপুল থেকে তুলে আনে এবং তাদের সঙ্গে আটকে রাখে। সেখানে তাদের নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। সমন্বয়ক হাসিব মাদ্রাসাছাত্র হওয়ায় এবং খুব সম্ভবত তার বোন মাদ্রাসার ছাত্রী হওয়ায় তাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। তার (হাসনাত) ফোন দিয়ে হাসিবের অবস্থান নির্ণয় করায় তার (হাসনাত) মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে।
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেরোবির সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জন আসামি। সাবেক উপাচার্যসহ ২৪ আসামি পলাতক। অন্য ৬ আসামি কারাগারে আছেন, তারা হলেনÑ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক সাবেক কর্মচারী আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।

