- শেখ হাসিনার রায় প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতিতে স্বাক্ষর দেওয়া শিক্ষকের একজন মাসুদ রানা
- ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামীপন্থি শিক্ষক সমিতি নীল দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক
- আছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ
সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ^বিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের আলোচিত শিক্ষক ড. মাসুদ রানা। আওয়ামীপন্থি শিক্ষক সমিতি নীল দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. রানা পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাজা প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতিতে স্বাক্ষর দেওয়ার শিক্ষকদের একজন। এ ছাড়াও গত বছর বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। আলোচিত এ শিক্ষকের পদোন্নতির খবর চাউর হওয়ায় হইচই পড়েছে বিশ^বিদ্যালয়ের ভেতরে-বাইরে।
ড. মাসুদ রানার পদোন্নতির বিষয়টি গত ৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডক্টর মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করা হয়। আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে পর্যায়োন্নয়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ড. মাসুদ রানা বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামীপন্থি শিক্ষক সমিতি নীল দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি চক্রের সঙ্গেও তার নাম জড়িয়ে রয়েছে। ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের বাংলো থেকে বিভিন্ন পরীক্ষার ওএমআর শিট ও এমপির ডিও লেটার উদ্ধার করা হয়। তখন ভর্তি পরীক্ষার ওএমআর কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন ড. মাসুদ রানা।
এ ঘটনা মাসুদ রানাসহ সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিষয়টির বিচার প্রক্রিয়া চলাকালে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে পর্যায়োন্নয়ন সভায় অংশগ্রহণে মাসুদ রানার নাম থাকায় সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, সহযোগী অধ্যাপক মাসুদ রানা বিগত আওয়ামী সরকারের সময়ে প্রভাব খাটিয়ে ভিসি সৌমিত্র শেখরকে ব্যবহার করে নানা অপকর্মে জড়িত ছিলেন। তা বিভিন্ন বিষয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে অধ্যাপক হতে তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে পদোন্নতি দেওয়া হলে জুলাই শহিদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে।
অভিযোগের বিষয়ে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাসুদ রানা বলেন, ‘সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক হতে গত ৯ মাস আগে আবেদন করেছি। পর্যায়োন্নয়ন কমিটির সভায় অংশগ্রহণের জন্য এখনো কোনো চিঠি পাইনি। পদোন্নতি হবে কি-না তাও জানি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার ওএমআর কেলেঙ্কারিতে আমার নাম অযথা জড়ানো হয়েছে। শেখ হাসিনার রায় প্রত্যাখ্যান করে আমার নাম ব্যবহার করে স্বাক্ষর দেওয়ার বিষয়টি অবগত নই। তবে এ সময় বিশ^বিদ্যালয়ের বাইরে থাকায় প্রতিবাদও করতে পারিনি।’
মাসুদ রানার পদোন্নতি বিষয়ে জানতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
তবে পর্যায়োন্নয়ন কমিটির সভার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে কথা বলা যায় না। আপনি অফিসে সামনাসামনি আসেন তারপর কথা বলব।’
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার সাজা দেওয়ার পর গত ১৭ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর মাহবুব আলম প্রদীপের পাঠানো ১০০১ শিক্ষকের স্বাক্ষর করা এক বিবৃতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও প্রহসনমূলক মামলার সাজানো রায় প্রত্যাখ্যান করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে রায় ঘোষণা করেছে তা প্রহসনমূলক ও অগ্রহণযোগ্য। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বর্তমানে ক্যাঙারু কোর্টের রূপ পরিগ্রহ করেছে এর স্বৈরাচারী, পক্ষপাতদুষ্ট এবং ন্যায়বিচার পরিপন্থি কার্যকলাপ তথা মিথ্যা সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত এ দেশের কোটি জনতা আধুনিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ ধরনের বিদ্বেষ ও ষড়যন্ত্রমূলক এবং পূর্বনির্ধারিত রায়কে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি এবং ক্যাঙারু কোর্টের প্রহসনমূলক রায়কে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন