ঢাকা বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫

ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেল ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্প’

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২৫, ০১:৫১ এএম

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্প’ ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কো ২০০৩ কনভেনশনের ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ কনভেনশনের আওতায় এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ একক নিবন্ধন।

বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের দলনেতা এবং ইউনেস্কো সাধারণ পরিষদের সভাপতি বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা এ স্বীকৃতিকে বাংলাদেশের জন্য ‘অসামান্য গৌরব’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে টাঙ্গাইলের তাঁতিদের শিল্পকর্ম যে বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেল, তা দেশের সব তাঁতি ও নারীর সম্মানের প্রতিফলন। রাষ্ট্রদূত তালহা এই অর্জন বাংলাদেশের তাঁতি সমাজ ও দেশের সব নারীর প্রতি উৎসর্গ করেন।

চলতি বছরের এপ্রিলে প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাস ইউনেস্কো সদর দপ্তরে ২০০৩ কনভেনশনের নির্ধারিত কাঠামো অনুযায়ী টাঙ্গাইলের শাড়ি বুনন শিল্পকে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে।

প্রতিটি আবেদন প্রথমে একটি মূল্যায়ন কমিটির প্রাথমিক পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে যায়। সব ধাপ সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর আবেদনটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হয়। কারিগরি দিক থেকে জটিল হলেও বাংলাদেশ দূতাবাস সম্পূর্ণ নিজস্ব দক্ষতায় নথিটি প্রস্তুত করে এবং তা গৃহীত হয়।

টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে সম্প্রতি সৃষ্ট বিতর্কের প্রসঙ্গও নতুন স্বীকৃতির আলোচনায় উঠে আসে। ২০২৩ সালে ভারত টাঙ্গাইল শাড়িকে তাদের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে ঘোষণা করলে বাংলাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তবে রাজনৈতিক জটিলতার সম্ভাবনা থাকলেও ইউনেস্কোর আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদ বাংলাদেশের জমা দেওয়া নথিকে উচ্চমানসম্পন্ন হিসেবে মূল্যায়ন করে। গবেষক ও পেশাজীবীদের মতে, এই স্বীকৃতির ফলে টাঙ্গাইল শাড়িকে ঘিরে আগের জটিলতার অনেকটাই নিরসন হয়েছে।

ভারতে এ নিবন্ধন নিয়ে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে কি নাÑ এমন প্রশ্নে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মু. রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক কনভেনশনের অধীনে নিবন্ধন হওয়ায় এর বৈধতা প্রশ্নাতীত।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের নারীদের কাছে শাড়ি সমানভাবে জনপ্রিয়। ফলে এই স্বীকৃতি শাড়িপ্রেমী নারীকে তার প্রিয় পোশাক নিয়ে নতুনভাবে গর্ব করার সুযোগ দেবে।

২০২২ সালে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে বাংলাদেশ চার বছরের জন্য ইউনেস্কো ২০০৩ কনভেনশনের আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সদস্য হয়। এর ফলে বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে নতুন গতি যুক্ত হয়। এই পর্ষদের ১৮তম সভায় ‘ঢাকার রিকশা ও রিকশাচিত্র’ স্বীকৃতি পায়। গত ৭ ডিসেম্বর পর্ষদের ২০তম সভা উদ্বোধন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকর। অনুষ্ঠানে যোগ দেন ইউনেস্কোর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক, মিশরের নাগরিক খালেদ এল এনানি। সভা আগামী ১৩ ডিসেম্বর সমাপ্ত হওয়ার কথা।

এর আগে বাংলাদেশের বাউল গান (২০০৮), জামদানি বুনন শিল্প (২০১৩), মঙ্গল শোভাযাত্রা (২০১৬), শীতলপাটি বুনন শিল্প (২০১৭) এবং ২০২৩ সালে ‘ঢাকার রিকশা ও রিকশাচিত্র’ ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায়।