সহকর্মী ও স্বজনদের কান্নায় ভাসিয়ে চিরনিন্দ্রায় শায়িত হলেন বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে নিহত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য নায়েক মো. আক্তার হোসেন। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ভোলার দৌলতখান ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে তাকে পৌরসভার অধ্যক্ষ জাকির হোসেন ফাউন্ডেশন জামে মসজিদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে সকাল ৯টার দিকে তার মরদেহ বহনকারী বিজিবির একটি হেলিকপ্টার দৌলতখান হেলিপ্যাডে এসে পৌঁছায়। সেখানে তার মরদেহ গ্রহণ করেন বিজিবির ২১ ব্যাটালিয়ন খুলনা থেকে আসা সুবেদার মো. হানিফের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি দল ও পরিবারের সদস্যরা।
পরে তাকে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজ রোডের নিজ বাড়িতে নেওয়া হয়। মরদেহ বাড়ি আনার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে আশপাশের পরিবেশ। সেখানে শেষ বিদায় জানান আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা।
বিজিবির সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিজিবির এই অকুতোভয় বীর নম্বর-৬২১১৬ নায়েক আক্তার হোসেন গত ১২ অক্টোবর সকালে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের রেজুআমতলী এলাকার পেয়ারাবুনিয়া অঞ্চলে দায়িত্ব পালনকালে মায়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি কর্তৃক সীমান্তে পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে মারাত্মক আহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে রামু সেনানিবাসের সিএমএইচে এনে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৩ অক্টোবর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিজিবির এই নির্ভীক বীর গত শুক্রবার দুপুরে শাহাদাতবরণ করেন।
স্বামীর অকাল মৃত্যুতে তিন সন্তান নিয়ে দিশাহারা স্ত্রী মুন্নি বেগম
পারিবারিক সূত্র জানায়, মৃত্যুকালে আক্তারের বাবা বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার আবদুল মান্নান, মা আমেনা বেগম, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। স্ত্রী মুন্নি বেগম গৃহিণী। বড় ছেলে জিদান বরিশাল বিএম কলেজে অনার্স ২য় বর্ষে ও একমাত্র মেয়ে সুশিলা আক্তার অজিহা দৌলতখান বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়েন। ছোট ছেলে সাফওয়ানের বয়স চার বছর। সাত ভাই-বোনের মধ্যে আক্তার তৃতীয়। ৭ বছর আগে বড় ভাই জাকির হোসেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কম্পানিতে চাকরিরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্ত্রী মুন্নি বেগম জানান, আশা ছিল বড় ছেলের একটা চাকরির ব্যববস্থা করে তিনি চাকরি থেকে চলে আসবেন। সব সময়ই বড় ছেলের চাকরির বিষয়ে কথা বলতেন। ছোট ছেলে সাফওয়ান তার খুব আদরের ছিল। হঠাৎ তার মৃত্যুতে তিন সন্তান নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন স্ত্রী মুন্নি বেগম। তিনি সরকারের কাছে বড় ছেলের জন্য একটা চাকরি দাবি করেন।
আক্তারের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার আব্দুল মান্নান জানান, তার তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে জাকির ৭ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এখন মেজো ছেলে আক্তার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে মারা গেল। ছেলে আক্তার দেশের জন্য নিজের জীবন দিয়ে গেছে। তার ছেলে যেভাবে মারা গেছে, সেভাবে যাতে আর কোনো মায়ের কোল খালি না হয় সে জন্য সরকারের কাছে সীমান্তে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানান।

