ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেশের ট্রান্সপোর্ট ও স্টিল খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান এরশাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান এরশাদ আলীর বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলায় হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া তার প্রতিষ্ঠানগুলো লুটপাট ও দখল করা হয়েছে। বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকা-ের অর্থদাতার তকমা দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে অন্তত ৪২টি মিথ্যা মামলা।
গতকাল শনিবার রাজধানীর মগবাজারে একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান এরশাদ আলী এসব অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘তার প্রতিষ্ঠানগুলো লুটপাট ও দখলের নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার বড় ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান জ্যোতি। এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান খান লিটন। তাদের হাতিয়ার ছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবির একাধিক কর্মকর্তা।’ রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে ওঠা পুলিশ ও দেশের প্রভাবশালী এই রাজনৈতিক চক্রের থাবায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন একসময়ের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী এরশাদ আলী।
এরশাদ আলী আরও বলেন, ‘আমাকে বিএনপির অর্থদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ৪২টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। একের পর এক গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের মাধ্যমে আমার ব্যবসা ধ্বংস করা হয়েছে। কলাবাগানের নাসির ট্রেড সেন্টারে এরশাদ গ্রুপের প্রধান কার্যালয়, ধানমন্ডির বাসভবন, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের গুদাম, স্টিল মিলসহ সবকিছু তারা দখল করে নেয়। আমার ১৩৭টি ট্রাক লুট করে নেওয়া হয়েছে। সোনারগাঁয়ের জংদা রি-রোলিং মিলস ও ডেমরার স্টিল মিল শামীম ওসমানের সহযোগী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী আজিজুর রহমান আজিজ দখল করে নেয়। আজিজের নেতৃত্বে দুই কারখানা থেকে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার মেশিন ও মালামাল লুট করা হয়েছে। সে এখনো এলাকায় ক্যাডার বাহিনী চালায়।’
সম্প্রতি দর্শনা সীমান্ত থেকে পালানোর সময় আটক হওয়া আজিজুর রহমান আজিজের বিরুদ্ধে হত্যা, গুম, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে উল্লেখ করে এরশাদ আলী বলেন, ‘আমরা আদালতের কাছে দাবি করেছি, এই সন্ত্রাসীকে যেন জামিন দেওয়া না হয়। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যাতে নিশ্চিত করা হয়।’ হয়রানির বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আমাকে বারবার মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। ২০১৭ সালে তিনবার আমাকে তুলে নিয়ে প্রতিবার ৫০ লাখ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। ডিবির তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার বাতেন ও ডিবি লালবাগের এডিসি মাহমুদা আফরোজ লাকীকে টাকা না দিলে হয়তো আজ বেঁচে থাকতাম না। দীর্ঘ কারাবাস ও নির্যাতনের কারণে শারীরিকভাবে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার ৮০ শতাংশ কিডনি নষ্ট, ডায়াবেটিস ও লিভার সিরোসিসে ভুগছি।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘এরশাদ আলী বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। তার করা মামলা এখনো বিচারাধীন। এখন অন্তত আদালতের মাধ্যমে যেন তিনি ন্যায়বিচার পান, সেই প্রত্যাশা করছি।’

