গ্রেড ও পদোন্নতি নিয়ে জটিলতা নিরসনসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। এ সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে কর্মবিরতি, লাগাতার অবস্থান, পরীক্ষা বর্জন ও আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা।
গতকাল শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ। তিন দাবির মধ্যে রয়েছেÑ প্রবেশ পর্যায়ে সহকারী শিক্ষক পদের বেতন ১১তম গ্রেড নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন মোর্চাভুক্ত সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহীনুর আল আমিন। তিনি বলেন, ‘সারা দেশে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছি এবং পাশাপাশি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মর্যাদার ও আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি কখনো সঠিকভাবে বিবেচিত হয়নি। শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের আন্তরিকতার সাথে কাজ করার সুযোগ তৈরি করতে হবে। শিক্ষকদের সামাজিক, অর্থনৈতিক মান উন্নয়ন ছাড়া শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে দাবি মানা না হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। যদি এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি বা ঘোষণা না আসে; তাহলে পরীক্ষা বর্জন এবং ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির এক অংশের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম তোতা সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষক নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী রবিউল ও অজিত পালের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন তপন কুমার মন্ডল।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন শাহিনূর আক্তার, সাবেরা বেগম, মনিরুজ্জামান মনির, মিজানুর রহমান, রাসেল কবির, ওয়াদুদ ভূইয়া, আমিনুল হক, ইলিয়াস হোসেন, আব্দুর রহমান, নাজমুল হোসেন, মতি লাল দাসগুপ্ত, তাজুল ইসলাম, টি এম জাকির হোসেন, শিরীন সুলতানা।
এসব দাবিতে গত ২৬ মে থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন শিক্ষকরা। দাবি আদায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ৫ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত দিনে ১ ঘণ্টা, ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত ২ ঘণ্টা, ২১ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন। পরে গত ২৯ মে সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলে কর্মবিরতির কর্মসূচি ২৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত করা হয়।
পরবর্তীতে গত ৩০ অগাস্ট দিনভর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করার পর সহকারী শিক্ষক পদকে প্রবেশ পর্যায়ের পদ ধরে একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, চাকরির ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা নিরসন ও প্রধান শিক্ষকের শতভাগ পদে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি দেওয়ার দাবি পূরণ না হলে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ‘আমরণ অনশন’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষকরা। কিন্তু দূর্গা পূজার কারণে অনশন কর্মসূচি ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ। গত ১৬ অক্টোবর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনার পর শিক্ষকরা অনশন কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেন।

