ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

বরিশালে নৈরাজ্য রোধে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

হাসিবুল ইসলাম, বরিশাল
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৫, ১২:৪১ এএম

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে পতিত আওয়ামী লীগ আহূত ১৩ নভেম্বরের ‘লক ডাউন’ কর্মসূচিকে ঘিরে নৈরাজ্য রোধে বরিশালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে। এই দিনটিতে কার্যক্রমনিষিদ্ধ দলটি যাতে কোনোরকম সহিংস পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সেজন্য শহরের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশিসহ জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কর্মসূচির একদিন আগে অর্থাৎ গতকাল বুধবার সকাল থেকে শহরবাসীর নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাড়তি উদ্যোগ নিয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধরতে তাদের বাসাবাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। তাদের এই অভিযানে কৃষক লীগ এবং ছাত্রলীগের অন্তত ৫ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য গতকাল বিকেলে রূপালী বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ১৩ নভেম্বর ‘ঢাকা লক ডাউন’ ঘোষণা করা হলেও বিভাগীয় শহর বরিশালসহ আশপাশ জেলাসমূহে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বড় ধরনের অঘটন ঘটিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধাক্কা দিতে চাইছে। শহরের কাশিপুর এলাকা থেকে মঙ্গলবার রাতে মিন্টু নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেপ্তার এবং জিজ্ঞাসাবাদে এই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। অবশ্য এর আগেই শহরের চারটি থানা কোতোয়ালি, কাউনিয়া, বন্দর এবং বিমানবন্দরের আওতাধীন এলাকাসমূহে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়। প্রতিটি থানার গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করাসহ শহরের প্রবেশদ্বার গড়িয়ারপাড়, দপদপিয়া এবং কালিজিরায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেকপোস্ট বসিয়েছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবারে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে ঘিরে নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে এবং জানমাল রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র‌্যাবও টহল ডিউটি পালন করে যাচ্ছে। সেই সাথে সাদা পোশাকে মাঠে অবস্থান নিয়েছে পুলিশের একাধিক গোয়েন্দা টিম।

নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কীর্তনখোলা নদী লাগোয়া জনপদ বরিশালে যাতে কোনোরূপ অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে তার জন্য বরিশাল বিএনপিও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতা আফরোজা খানম নাসরিন কমী-সমর্থকদের নিয়ে শহরে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়েছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের নৈরাজ্য রুখে দেওয়াসহ শহরকে নিরাপদ রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ^াসও দেওয়া হয়।

মাঠপুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ১৩ নভেম্বরকে ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইলে তা প্রতিহত করতে সর্বোচ্চ নির্দেশনা রয়েছে। প্রস্তুতিস্বরূপ শহরের সদর রোড, আমতলার মোড়, রূপাতলী, সিঅ্যান্ডবি রোড, নথুল্লাবাদ, কাশিপুর, গড়িয়ারপাড়সহ অন্তত শতাধিক স্থানে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার পাশাপাশি চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হচ্ছে। মাঠপুলিশের এই কার্যক্রম সিসি ক্যামেরাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তদারকি করছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শফিকুল ইসলামসহ ডিসি-এডিসি পদমর্যাদার আরও অন্তত ৬ কর্মকর্তা।

কোতোয়ালিসহ মেট্রোপলিটনের আওতাধীন চার থানার ওসি রূপালী বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেন, শহরবাসীর জানমাল রক্ষায় চেয়ে কয়েকগুণ নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১৩ নভেম্বরের কর্মসূচিকে ঘিরে দুদিন আগে থেকেই তাদের প্রস্তুতি রয়েছে। বিশেষ করে শহরের প্রবেশদ্বারগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক নজর রেখেছে, যাতে বাইরে থেকে কেউ বা কারা প্রবেশ করে নৈরাজ্য তৈরি না করতে পারে।

এই তথ্য নিশ্চিত করে বরিশাল পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে জানান, শহরের চারদিকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও র‌্যাব টহলে থাকলেও বিশেষ স্থানসমূহে পুলিশ অবস্থান নিয়ে আছে এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম সার্বক্ষণিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দুদিনে আওয়ামী লীগের অন্তত ৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে মাঠপুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে, জানান বিএমপি কমিশনার।

এদিকে আওয়ামী লীগের ১৩ নভেম্বরের কর্মসূচি রুখে দিতে বরিশাল শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মিছিলটি শহরের জিলা স্কুলের সামনে থেকে বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সদর রোড গিয়ে সমাপ্ত হয়।’