ঢাকা শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

বললেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

ঐকমত্যের কথা বলে একটি ভুয়া দলিল রচনা হয়েছে 

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ১২:৫১ এএম

ঐকমত্যের কথা বলে একটি ভুয়া দলিল রচনা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও সভাপতিম-লীর সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের দিনে ‘গণভোটের’ জন্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে প্রস্তাব হাজির করেছেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা ঐকমত্যের কথা বলে একটি ভুয়া দলিল রচনা করেছে। সাংবিধানিক আদেশ বলবৎ করে সরকার যা করতে যাচ্ছে গণভোটের মধ্য দিয়ে, তার বৈধতা হবে না। ঐকমত্যের বাইরে কোনো বিষয় চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। ক্ষমতাসীন সরকার সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের মধ্য দিয়ে দেশকে দীর্ঘমেয়াদি এক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নতুন মোড়কে পুরাতন ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করছে বর্তমান সরকার।’

গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবির জাতীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি সর্বগ্রাসী সংকট থেকে দেশকে বাঁচাতে ফ্যাসিস্ট দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তি ও উগ্র ডানপন্থা প্রতিরোধের পাশাপাশি বিকল্প বামপন্থি ও গণতান্ত্রিক শক্তির সরকার গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ বারবার স্বৈরাচারী শাসনের কবলে পড়েছে বলে মন্তব্য করে সেলিম বলেন, ‘দেশের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে স্বৈরাচারকে উৎখাত করেছে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বারবার নানা শঙ্কার জন্ম দিচ্ছে।’ তিনি দাবি জানান, অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করতে হবে।

তিনি আরও বালেন, ‘দেশ এক সর্বগ্রাসী সংকটে নিমজ্জিত। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে পাকিস্তানের জিঞ্জির থেকে মুক্ত করেছি, ক্ষমতাসীন ইউনূস সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশকে মার্কিন ভূরাজনৈতিক স্বার্থের অনুগত করছে, যা দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে।’

সিপিবি সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বর্ষীয়ান মার্কসবাদী চিন্তাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাসদের প্রধান উপদেষ্টা কমরেড খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক কমরেড আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, সিপিবির সাবেক সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম, সভাপতিম-লীর সদস্য রাগিব আহসান মুন্না, এস এ রশীদ, মো. আমিনুল ফরিদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স ও ডা. দিবালোক সিংহ।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সমাজবিপ্লবীদের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আমাদের জন্য এখন প্রয়োজন, যারা ব্যক্তি মালিকানা উচ্ছেদ করে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে চান, তাদের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠন করা। এবারকার যুক্তফ্রন্ট হবে বিপ্লবীদের যুক্তফ্রন্ট, সমস্ত বামপন্থির ফ্রন্ট। আমি মনে করি, সেই ফ্রন্টের নেতৃত্ব দিতে হবে কমিউনিস্ট পার্টিকে। তাদের আওয়াজ তুলতে হবেÑ সমাজবিপ্লবীরা এক হও। আশা করি কমিউনিস্ট পার্টি এ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য অর্জনে ইউনূস সরকার ব্যর্থ হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান জনতার বেহাত হয়েছে। সরকার নারীদের, সংখ্যালঘু মানুষের কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়নি। গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বের দাবিদার একটি গোষ্ঠী নতুন করে লুটপাট ও দখলদারিত্বের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। আমাদের সরকার এ দেশে প্রথম গণতান্ত্রিক সরকার হবে, যারা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণ করবে।’

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন অবিলম্বে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তপশিল ঘোষণার দাবি জানান। নির্বাচনে জামানতের অর্থ কমানো ও প্রার্থীদের সমতা নিশ্চিত করার দাবিতে আগামী ২৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন ঘেরাও এবং জেলা ও উপজেলায় নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন সিপিবি সভাপতি। এ ছাড়া তিনি লালদিয়া টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে হস্তান্তরের চুক্তি স্বাক্ষর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১৬ নভেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ ছাড়া ২৮ নভেম্বর ঢাকায় নারীদের রাজনৈতিক কনভেনশন এবং ২৯ নভেম্বর বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশ জাসদসহ বাম-গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল দলসমূহের উদ্যোগে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় জনগণের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন।