আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার সেবা-শুশ্রুষা করনি। বান্দা বলবে, পরওয়ারদিগার! আমি কী করে আপনার সেবা শুশ্রুষা করব! আপনি সারা জাহানের প্রতিপালক।
আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি কি জানতে না আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল? কিন্তু তুমি তার সেবা করনি, তুমি কি জানতে না যে, তুমি তার সেবা-শুশ্রুষা করলে আমাকে তার কাছেই পেতে।
আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে আদম সন্তান আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে খেতে দাওনি। বান্দা বলবে, পরওয়ারদিগার! আমি কী করে আপনাকে আহার করাতে পারি! আপনি তো সারা জাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে আহার চেয়েছিল? তুমি তাকে খেতে দাওনি। তুমি কি জানতে না, যদি তুমি তাকে আহার করাতে, তাহলে তা অবশ্যই আমার কাছে পেতে। আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে আদম সন্তান আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। বান্দা বলবে, পরওয়ারদিগার! আমি কী করে আপনাকে পানি পান করাব, অথচ আপনি সারা জাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তাকে পানি পান করাওনি। যদি তুমি তাকে পানি পান করাতে, তাহলে তা আমার কাছে পেয়ে যেতে। (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৯)
এ হাদিস থেকে বোঝা যায় আল্লাহ তাআলা চান, তার বান্দারা পরস্পরের প্রতি সহমর্মী হোক, একজনের বিপদে আরেকজন এগিয়ে যাক। কেউ অসুস্থ হলে সুস্থরা তাকে দেখতে যাক, তার সেবা শুশ্রুষা করুক, কেউ অনাহারে থাকলে সামর্থ্যবানরা তার খাবার-পানীয়ের ব্যবস্থা করুক। এসব কাজের মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করুক যে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে আল্লাহ তাআলা তাদের সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ তাআলা চাইলে দুনিয়াতে কেউ বিপদে থাকত না, কেউ অভাবে থাকত না। আল্লাহ তাআলাই দুনিয়াতে অভাব, অসুস্থতা, দুঃখ-দুর্দশা সৃষ্টি করেছেন। কারণ, দুনিয়া পরীক্ষার জায়গা। যারা বিপদে থাকে তারা যেমন ধৈর্যধারণ, আল্লাহর কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে, যারা সুখ ও নিরাপত্তা লাভ করে, সমৃদ্ধির মধ্যে থাকে, তাদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় বিপদগ্রস্তদের যথাসাধ্য সাহায্য করা। আল্লাহ তাআলা যতটুকুই সামর্থ্য দিয়েছেন, তা নিয়ে বিপদগ্রস্ত বান্দাদের পাশে দাঁড়ানো। এভাবে তারা আল্লাহর নেয়ামতের হক ও শোকর আদায় করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন, তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা করতে চান। সুতরাং তোমরা ভালো কাজে প্রতিযোগিতা কর। (সুরা মায়েদা: ৪৮)
অন্যের সাহায্যে এগিয়ে গেলে মানুষ আল্লাহর সাহায্য লাভ করে। আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট হন এবং তার নেয়ামত আরও বাড়িয়ে দেন। কারণ এর মাধ্যমে আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া প্রকাশ পায়। আল্লাহ তার কৃতজ্ঞ বান্দাদের নেয়ামত বাড়িয়ে দেন আর অকৃতজ্ঞরা শাস্তির সম্মুখীন হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, স্মরণ কর, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের জন্য (আমার নেয়ামত) বৃদ্ধি করে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও (তবে জেনে রেখ, অকৃতজ্ঞদের জন্য) আমার শাস্তি অবশ্যই কঠিন। (সুরা ইবরাহিম: ৭)
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, রহমকারীদের ওপর রহমানও রহম করেন। আপনারা পৃথিবীবাসীদের প্রতি রহম করবেন তাহলে আকাশবাসী আপনাদের ওপর রহম করবেন। (সুনানে তিরমিজি: ১৯৩০)
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো ইমানদারের দুনিয়া থেকে কোনো বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ তাআলা বিচার দিবসে তার বিপদ দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো দুস্থ লোকের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দুরবস্থা দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সহযোগিতায় আত্মনিয়োগ করে, আল্লাহ ততক্ষণ তার সহযোগিতা করতে থাকেন। (সহিহ মুসলিম: ৭০২৮)
আপনার মতামত লিখুন :