শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৫, ০১:২৬ এএম

বিআরটিএ’র সেবাব্যবস্থায় প্রয়োজন নিরপেক্ষতা এবং স্বচ্ছতা

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৫, ০১:২৬ এএম

বিআরটিএ’র সেবাব্যবস্থায় প্রয়োজন নিরপেক্ষতা এবং স্বচ্ছতা

অভ্যুত্থানের বুকচিরে সবুজের বুকে জেগে ওঠে লাল পতাকা আর বারবার উজ্জীবিত হয় স্বাধীনতা। কিন্তু স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা কোথায়? নানারকম অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খলের ভিড়ে এ রকম প্রশ্ন উঠে আসে প্রায়শই। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও মূল চেতনা, ন্যায়, সমতা ও সুশাসন আজও অধরা থেকে গেছে। এর সবচেয়ে প্রকট উদাহরণ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। এক সময় যে প্রতিষ্ঠানটি সড়ক নিরাপত্তা ও যানবাহনের মান নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল; সেটিই এখন দালাল, ঘুষ ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নিয়ম মেনে গাড়ির ফিটনেস, রেজিস্ট্রেশন বা কাগজপত্র নবায়ন করতে গেলেও সাধারণ মানুষকে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। ঘুষ না দিলে কর্মকর্তাদের টালবাহানা, দালালের দৌরাত্ম্য মিলিয়ে বিআরটিএ যেন এখন সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের প্রতীক। সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, বিআরটিএ এখন নিজেই ‘ফিটনেসবিহীন’।

এই প্রতিষ্ঠানে নিয়মের বদলে চলছে টাকার প্রভাব। যেসব গাড়ি প্রকৃতপক্ষে রাস্তায় চলার অযোগ্য, সেগুলোও ঘুষের বিনিময়ে ফিটনেস সনদ পেয়ে যায়। বাসমালিকদের ভাষায়, গাড়ির সবকিছু ঠিক থাকলেও অন্তত ৫-৭ হাজার টাকা, আর যদি সামান্য ত্রুটি থাকে, তাহলে ১৫-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয় দালালদের মাধ্যমে। অন্যদিকে, যে গাড়িতে বড় কোনো সমস্যা থাকে, তাদের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত কিছু দিলেই সেটি ফিট হয়ে যায়। ফলে ঘুষই এখন ফিটনেস পরীক্ষার প্রধান মাপকাঠি। বিদেশে যেখানে ফিটনেস পরীক্ষায় ব্যর্থ যানবাহন সরাসরি বাতিল করে দেওয়া হয়, সেখানে বাংলাদেশে সেই যানবাহনই ঘুষের বিনিময়ে চলাচলের অনুমতি পায়। এতে শুধু আইনের লঙ্ঘনই ঘটে না, সড়কে বেড়ে যায় দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও জননিরাপত্তার ঝুঁকি। যাত্রীদের জীবন এখন প্রশাসনিক দুর্নীতির হাতে জিম্মি। অথচ বিআরটিএর কর্মকর্তারা দাবি করেন, ঘুষের ব্যাপারে তারা অবগত নন।

কিন্তু যখন অভিযোগগুলো বছরের পর বছর একই থাকে, তখন অজ্ঞতা নয়, এটিকে অস্বীকারই বলা যায়। বিআরটিএর এই অনিয়ম শুধু একটি দপ্তরের ব্যর্থতা নয়; এটি গোটা সমাজে দুর্নীতি সংস্কৃতির প্রতিফলন। যখন সরকারি সেবাও টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়, তখন সততা ও ন্যায়ের মূল্য হারায়। এই মানসিকতা একদিন পুরো সমাজকে পঙ্গু করে দিতে পারে। রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামো তখন আর জনগণের সেবক নয়, বরং দখলদার শ্রেণির স্বার্থরক্ষক হয়ে দাঁড়াবে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বাস্তব পদক্ষেপ। প্রথমত, বিআরটিএর কার্যক্রমকে পুরোপুরি ডিজিটাল করতে হবেÑ যাতে আবেদন, ফি প্রদান ও ফিটনেস টেস্টের রেকর্ড সব অনলাইনে হয় এবং ঘুষের সুযোগ না থাকে। দ্বিতীয়ত, একটি স্বাধীন তদারকি কমিটি গঠন করতে হবে, যেখানে নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ থাকবে। তারা নিয়মিতভাবে বিআরটিএর কর্মকা- পর্যবেক্ষণ করবে এবং রিপোর্ট প্রকাশ করবে।

তৃতীয়ত, যেসব কর্মকর্তা বা দালালের বিরুদ্ধে ঘুষের প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে অন্যরা ভয় পায়। একই সঙ্গে সততা বজায় রাখা কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করতে হবে, যাতে ভালো কাজের প্রেরণা বাড়ে। এ ছাড়া জনগণের মধ্যেও সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। যাতে করে কেউ ঘুষ দিতে বাধ্য না হয় এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে সাহস পায়। সরকার চাইলে বিআরটিএকে একটি সেবামুখী স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

কারণ এই সংস্থাটির কাজ শুধু গাড়ির ফিটনেস দেওয়া নয়, দেশের সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও এর প্রধান দায়িত্ব। অতএব, বিআরটিএর দুর্নীতি শুধু গাড়ির নয়, রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ফিটনেসেরও প্রশ্ন তুলে দেয়। অনিয়ম আর ঘুষের এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে একটি জবাবদিহিমূলক, প্রযুক্তিনির্ভর ও ন্যায্য সেবাব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলেই বলা যাবে বিআরটিএ অবশেষে ফিট হয়েছে। আর তখনই স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থে বলা যাবে, এই দেশ শুধু মানচিত্রে নয়, সুশাসনেও সত্যিকারের স্বাধীন।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!