এ সময়ের দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী এ্যাথেনা অধিকারী। ঢাকায় এক খ্রিষ্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার অভিনয় জীবন শুরু করেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর এক টিভিসির পার্শ্ব চরিত্রে কাজের মাধ্যমে। এরপর ধীরে ধীরে অভিনয়ের প্রতি তার আগ্রহ তৈরি হয়। শুরুতে তিনি ছোট ছোট চরিত্রে কাজ করেছেন। পরে কঠোর পরিশ্রমের পর কেন্দ্রীয় চরিত্রে কাজের সুযোগ পান। ‘এতিম মেয়ে’ এবং ‘কিশোরী মা’ এই দুই নাটকে কাজ করে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বলে আলাপকালে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে জানান।
ছোট পর্দা থেকে শুরু করে ওয়েব কনটেন্ট, সব মাধ্যমেই তিনি নিজেকে আলাদা করে তুলেছেন অভিনয়ের গুণে। ধীরে ধীরে গড়ে তুলছেন নিজের অভিনয় জীবনের স্বপ্নের পথ। কাজের প্রতি একাগ্রতা ও চরিত্র বাছাইয়ে সচেতনতা তাকে নিয়ে যাচ্ছে নতুন সম্ভাবনার দিকে। বর্তমানে এ্যাথেনা একক নাটকের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি নারীকেন্দ্রিক এবং ভিন্ন ধরনের গল্পের ওপর কাজ করতে আগ্রহী। এই অভিনেত্রী সব ধরনের কাজ করেন না, বরং সচেতনভাবে বেছে বেছে কাজ করছেন।
শুরুর দিকে অভিনয়ের পথে পরিবারের কোনো বড় বাধা ছিল না। ছোটবেলা থেকেই এ্যাথেনার মায়ের স্বপ্ন ছিল, তার মেয়ে বড় হয়ে নায়িকা হবে। মায়ের সমর্থন সবসময় তার সঙ্গে ছিল এবং এখনো আছে। প্রাথমিক সময়ে তার বাবার ওতটা আগ্রহ ছিল না। তিনি মনে করতেন এ্যাথেনা শুধু মজা করে কাজ করছেন এবং এটি কোনো স্থায়ী ক্যারিয়ার হবে না। তাই তেমন কোনো প্রতিক্রিয়াও দেখাননি। বর্তমানে বাবা তার কাজ নিয়ে গর্ব করেন এবং নিজেই তাকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন। মায়ের পূর্ণ সমর্থন এবং বাবার প্রেরণাই এ্যাথেনাকে তার অভিনয় যাত্রায় এগিয়ে নিয়ে গেছে।
কোন কাজ করবেন তা বাছাই করার ক্ষেত্রে এ্যাথেনা সর্বদা গল্প ও চরিত্রকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। তিনি জানান, গল্পের প্রেক্ষাপট এবং চরিত্রের সামাজিক প্রাসঙ্গিকতা তার সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই অভিনেত্রী বলেন, ‘কাজ বাছাই করার সময় আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই গল্পকে। গল্পটি পড়ার সময় আমি একজন দর্শকের দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবি। এরপর দেখি চরিত্রটি আমাদের সমাজের সঙ্গে খাপ খায় কিনা। অনেক চরিত্র আছে, যেখানে গালিগালাজ বা উগ্র কর্মকা- থাকে, যা সমাজের প্রেক্ষাপটে যায় না। এ ধরনের চরিত্রে কাজ করি না। চেষ্টা করি আমার চরিত্রটি একজন বাঙালি নারীর সঙ্গে মিল রেখে তৈরি হোক, যাতে প্রত্যেক বাঙালি নারী নিজের সঙ্গে চরিত্রটির মিল খুঁজে পায়। চরিত্রের পর আমি নির্মাতাকেই নির্বাচিত করি।’
এ্যাথেনা টেলিভিশন নাটক এবং ওয়েব কনটেন্ট, উভয় মাধ্যমেই কাজ করছেন এবং নিজেকে দুই মাধ্যমেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তার ভাষায়, ‘আমি একজন শিল্পী, তাই দুই মাধ্যমেই নিজেকে উপযুক্তভাবে উপস্থাপন করি। কোনো মাধ্যমকে আলাদা করতে চাই না।’
এ্যাথেনা চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং বড় পর্দায় কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন, কোন চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন তা মূলত গল্প ও চরিত্রের ওপর নির্ভর করবে। এ্যাথেনা বলেন, ‘অবশ্যই চলচ্চিত্র সবচেয়ে বড় অঙ্গন। বড় পর্দায় কাজ করার আগ্রহ আছে, সেটা অবশ্যই গল্প এবং চরিত্রের উপর নির্ভর করে। আমি এমন একটি চলচ্চিত্র করতে চাই, যা আন্তর্জাতিকভাবে হিট হবে। নায়িকার চরিত্র যেন স্বল্প না হয়, বরং দীর্ঘ চরিত্র হয়; যাতে অভিনয়ের অনেক পরিসর থাকে।’
এ্যাথেনা ভবিষ্যতে নিজেকে আন্তর্জাতিক পরিসরে দেখতে চান। তিনি জানান, তার লক্ষ্য এমন কাজ করা যা বিশ্বব্যাপী দর্শকের কাছে পৌঁছাবে এবং দেশের গৌরব বৃদ্ধি করবে। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষের স্বপ্ন দিন দিন বড় হতে থাকে, আমারও তাই। আমি চাই, আমার একটি কাজ আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশ পাবে, সেটি কান ফেস্টিভালে দেখানো হবে এবং বিশ্বব্যাপী সবাই এটি দেখবে। এটাই আমার স্বপ্ন। সেই সঙ্গে আমাদের দেশের মানুষও গর্ববোধ করবে এবং বিশ্বে বাংলাদেশের নাম অনেক উপরে উঠবে।’

