বলিউড ও দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা রাকুল প্রীত সিং। এই নামটির সঙ্গে জুড়ে আছে এক অনন্য উজ্জ্বলতা। তিনি শুধু একজন অভিনেত্রী নন, বরং আধুনিক নারীর প্রতীক। যিনি একসঙ্গে সৌন্দর্য, মেধা ও দৃঢ়তার প্রতিচ্ছবি। এই অভিনেত্রীকে চিনে না এমন মানুষ খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে।
বিশেষ করে ‘দে দে পেয়ার দে’, ‘ডক্টর জি’ বা ‘রানওয়ে থার্টি ফোর’ তার অভিনয় দেখে মুগ্ধ দর্শককুল। সমাজ মাধ্যমেও তার ফলোওয়ার্সের সংখ্যাও বেশ ভালোই। তার অভিনয়ের সঙ্গেই ছিপছিপে মেদহীন চেহারার ফ্যান অনেকেই। রাকুলের মতো টানটান মেদহীন চেহারা অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো। কিন্তু মেদহীন চেহারা চাই বললেই তো হলো না।
১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে রাকুলের জন্ম। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন প্রাণবন্ত, হাসিখুশি ও আত্মবিশ্বাসী। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেসাস অ্যান্ড মেরি কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক করার সময়ই শুরু হয় তার মডেলিং ক্যারিয়ার। কলেজের ফ্যাশন শো, বিজ্ঞাপন ও কনটেস্টে নিয়মিত অংশ নিতে নিতে একসময় সেলুলয়েডের জগতে প্রবেশ করেন তিনি। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ২০০৯ সালে তেলেগু চলচ্চিত্র ‘গিলি’ দিয়ে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। প্রথম সিনেমায় নবাগতার ভূমিকা হলেও তার পর্দায় উপস্থিতি সবাইকে চমকে দিয়েছিল। দক্ষিণ ভারতের দর্শক তাকে শুধু ‘হিরোইন’ হিসেবে নয়, বরং এক পরিশ্রমী ও নিবেদিত শিল্পী হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
প্রযোজক ও পরিচালকরা বলেন, রাকুলের সবচেয়ে বড় গুণ তার পেশাদারিত্বÑ সময়ানুবর্তিতা ও কঠোর অনুশীলন তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে। ২০১৪ সালে ‘ইয়ারিয়া’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন রাকুল। তারপর একে একে ‘আইয়ারি’, ‘দে দে প্যার দে’, ‘রানওয়ে থার্টি ফোর’, ‘ডক্টর জি’, ‘থ্যাঙ্ক গড’ প্রতিটি সিনেমায় তিনি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। বিশেষ করে ‘দে দে প্যার দে’তে অজয় দেবগনের বিপরীতে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল সমালোচক মহলে। রোমান্টিক চরিত্র থেকে শুরু করে গম্ভীর নাটকীয় চরিত্র- সব জায়গাতেই তিনি দেখিয়েছেন বৈচিত্র্যের ছোঁয়া।
বলিউডে পা রাখতে অভিনেত্রীকে কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। রকুলের প্রথম হিন্দি সিনেমা ছিল ‘ইয়ারিয়াঁ’। এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘আমি তো অংকে স্নাতক। অভিনেত্রী হিসেবে সফল না হলে আবার পড়াশোনায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’
স্নাতকে পড়াশোনা চলাকালীন রাকুল তার প্রথম সিনেমাতে অভিনয় করেন। ক্যারিয়ার নিয়ে বিকল্প পরিকল্পনাও ছিল প্রযোজক জ্যাকি ভাগনানির জীবনসঙ্গী রাকুলের। অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি ফ্যাশন নিয়ে এমবিএ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্য সহায়, আর আমাকে সে দিকে যেতে হয়নি।’ হালে দুগুণ মজা আর উত্তেজনা নিয়ে ফিরে এসেছেন অজয় দেবগন ও রাকুল প্রীত সিং! বক্স অফিসে মন জয় করা এবং দর্শকদের হাসির খোরাক দেওয়া জনপ্রিয় রোমান্টিক কমেডি ‘দে দে পেয়ার দে’-এর সিক্যুয়েল ‘দে দে পেয়ার দে ২’ মুক্তি পেয়েছে সদ্য।
২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দে দে প্যায়ার দে’ সিনেমার সিকুয়েল এটি। প্রথম সিনেমাতে অজয়ের সঙ্গে ছিলেন টাবু ও রাকুল। সিকুয়েলে টাবুকে মুখ্য চরিত্রে দেখা যাবে না। গল্পে দেখা যাবে এক ত্রিকোণ প্রেমের কাহিনি, যেখানে রাকুলের বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাধবন। গত বছরে তাকে দুটি তামিল সিনেমা ‘আয়লান’ ও ‘ইন্ডিয়ান টু’-এ দেখা গেছে। এ বছর তার অভিনীত একটি হিন্দি সিনেমা ‘মেরে হাসবেন্ড কি বিবি’ মুক্তি পেয়েছে।
বি টাউনে চর্চিত মুখ রাকুল প্রীত সিংহ। তার নির্মেদ চেহারা, লাবণ্যময় মুখ নিয়ে যথেষ্ট উৎসাহ অনুরাগী মহলে। তবে সৌন্দর্য ধরে রাখতে ‘দে দে পেয়ার দে’র নায়িকা কী করেন, জানলে অবাক হবেন অনেকেই। সৌন্দর্য ধরে রাখা মুখের কথা নয়, সবাই জানেন। বিশেষত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হয়। উপযুক্ত ডায়েট এবং শরীরচর্চা তাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ। কিন্তু রূপচর্চা?
এক পডকাস্টে রাকুল জানিয়েছেন তার রূপ-রহস্য। নামি-দামি প্রসাধনী নয়, বরং ঘরোয়া উপাদানই তিনি ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে বেছে নেন। এমনিতে ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং করেন তিনি নিয়ম মেনে। আর মুখে ফোলাভাব থাকলে ব্যবহার করেন বরফ জল। অভিনেত্রী বলছেন, ‘আমার ত্বকচর্চার রুটিন অত্যন্ত সাধারণ। ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিই। তার পর ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং করি। যদি মনে হয় মুখ ফোলা লাগছে, বরফ জলে কিছুক্ষণ মুখ ডুবিয়ে রাখি।’ রকুল জানিয়েছেন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ডিনার শেষ করার চেষ্টা করেন তিনি। এই সময়ে কিছু কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার থাকে তার ডায়েটে। তবে তা বিকেলের ডায়েটের তুলনায় কম কার্বহাইড্রেট থাকে।
সেনা পরিবারে বড় হওয়ার কারণে বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিলেন রাকুল। নতুন নতুন জায়গায় পোস্টিং হতো রাজেন্দ্রর। একবার মণিপুর বর্ডারে পোস্টিং হয়। সেই সুবাদে আইজলে ছিল তার পরিবার। বর্ডারে বিপন্ন বাবার প্রাণ, তাই সারাক্ষণই আশঙ্কায় থাকতেন রাকুল।
তিনি বলেন, ‘তার মায়ের পক্ষে তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া খুব মুশকিল হতো। বাবার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকতেন।’ অভিনয়ের পাশাপাশি রাকুল একজন ফিটনেস আইকন। নিয়মিত যোগব্যায়াম, ব্যায়াম আর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের অনুপ্রেরণায় ভরপুর তার জীবন। তিনি একাধিক জিম ও ওয়েলনেস সেন্টারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যেখানে তরুণ প্রজন্মকে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার বার্তা দেন।

