ঢাকা শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

চরিত্র নয়, আগে গল্প দেখি

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০২:৫০ এএম

টেলিভিশন নাটক, ওয়েব সিরিজ ও সিনেমাÑ সব মাধ্যমেই নিজের স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়ে দর্শক হৃদয়ে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন নির্মাতা থেকে অভিনেতা বনে যাওয়া সুমন আনোয়ার। চরিত্রের গভীরে ঢুকে বাস্তবতার ছোঁয়ায় অভিনয়কে জীবন্ত করে তোলাই তার বিশেষত্ব। অভিনয়ের পাশাপাশি নির্মাতা ও লেখক হিসেবেও তিনি সমানভাবে সক্রিয়। অভিনয়, নির্মাণ ও সমসাময়িক প্রসঙ্গে কথা বলেছেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রকিবুল ইসলাম আফ্রিদি

অভিনয়ে আসার গল্পটা জানতে চাই

অনেক ছোটবেলা থেকেই আমার এক ধরনের আকর্ষণ ছিল সিনেমা, অভিনয় ও লেখার প্রতি। এসএসসি পরীক্ষার পর থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হই। ছোটবেলায় যখন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে ছিলাম, তখন আমাদের ন্যাশনাল ক্যাম্প ছিল; সেখানে অনেক বড় একটা ফিল্ড ড্রামায় অংশগ্রহণ করি। সেখান থেকেই অভিনয় ভালো লাগতে শুরু করে, এভাবেই শুরু।

অভিযোগ, নাটকের মান কমেছে। কি বলবেন?

মানহীন কনটেন্ট, রাজনীতি; মানহীন পুরো বাংলাদেশের সংস্কৃতি চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দেখা যায়, যেখানে মান আছে সেটা কখনোই ভাইরাল হয় না, যেটা মানহীন সেটাই ভাইরাল হয়। সংবাদ মাধ্যমেও এসবই চলছে। তারা মানহীন বিষয়কে ভাইরাল করছে। খুব ন্যূনতম ইস্যু যাদের নাম আমি বলতে পারছি না, তাদেরকে লিড করে নিউজ করছে। তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক, ভোটে দাঁড়ানো; নানা কিছু নিয়ে নিউজ হয়। আপনারা মানহীন মিডিয়া তৈরি করবেন, আর শুধু পরিচালক; অভিনেতা, লেখক মান বয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব থাকবে, বিষয়টাকি এ রকম?

তিন মাধ্যমেই কাজ করছেন। কোন মাধ্যমে চ্যালেঞ্জিং মনে হয়?

এখানে বিভাজন করা হচ্ছে। এখানে একটাই মাধ্যম সেটা হচ্ছে, পারফরমিং আর্ট। মানে শিল্পীকে তার মাধ্যম অনুযায়ী অভিনয় করতে হবে। আমি যখন গল্প লেখি, তখন একটা কিছুকে কল্পনা করি। আবার যখন অভিনয় করি তখন চরিত্রের মধ্যে ঢুকে যাই, আর যখন পরিচালনা করি তখন গল্প বলার চেষ্টা করি। এই সবগুলোর যাত্রা কাছাকাছি, একই রকম। কারণ সবগুলো যাত্রা একটা গল্প, জীবন; একটা মুহূর্তকে তুলে ধরার জন্য। এখানে আলাদা মাধ্যম নেই।

কোন ধরনের গল্পে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

আমি একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে পছন্দ করি না। চরিত্র দেখে অভিনয় করি না। আগে গল্প দেখি। তারপর যে মানুষটি এই গল্পটি বলবে সেই মানুষটির কল্পনার জায়গা দেখি। আমি যদি আগেই শুধু চরিত্র দেখি, যেমন একটি রাজার চরিত্র পেলাম, কিন্তু অনেক দরিদ্র আয়োজনের মাত্রা, তাহলে তো হবে না। রাজার চরিত্র করতে গেলে ওই রকম রাজার মতো পরিচালক লাগবে, যার হৃদয় রাজপ্রাসাদের চেয়েও বড়। এগুলো অনেক ধাপে ধাপে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া হয়।

আপনার কিছু কাজের সংলাপে অশ্লীল বাক্য ছিল, কিন্তু সেটি চরিত্রের বাস্তবতার অংশÑ এটা নিয়ে দর্শকের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?

বর্তমানে যারা রাজনীতি করছে, বক্তৃতায়, মিটিং-মিছিলে গালি দিয়ে ফেলছে, তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে তারা গালি দিচ্ছে কেন? কেন গালি দিল? বা রাস্তাঘাটে মারামারি-ঝগড়ার সময় গালি দেওয়া হচ্ছে, তখন কি গালি ছাড়া অভিব্যক্তি প্রকাশ হচ্ছে বাংলাদেশে? আমি যেই চরিত্রের জন্য অভিনেতা হিসেবে নির্বাচিত হই, যদি সেই চরিত্রের ভেতরে এমন ধরনের অভিব্যক্তি থাকে, তখন আমি সেই চরিত্রের প্রয়োজন অনুযায়ী ওই শব্দ ব্যবহার করে সেই অভিব্যক্তিই প্রকাশ করি।

বহুমাত্রিক চরিত্রের প্রস্তুতি কেমন থাকে?

চরিত্রের প্রস্তুতির যে প্রক্রিয়া এটা বোঝা অনেক কঠিন। এটা বলে বোঝানো যাবে না।

ওয়েব সিরিজে কাজ করার সময় চরিত্রের স্বাধীনতা ও কনটেন্টের গভীরতা কি বেশি থাকে?

আমি যে কাজটাই করি সে কাজটিই স্বাধীনভাবে করার চেষ্টা করি। পরাধীনভাবে কোনো কিছু করি না।

যদি নিজেকে দশ বছর পর কল্পনা করেনÑ কোন জায়গায় দেখতে চান?

আমি আমাকে কোথায় দেখতে চাই তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, আমি বাংলা সিনেমাকে আন্তর্জাতিক একটা জায়গায় দেখতে চাই। বাংলা চলচ্চিত্রের যে ইমেজ এবং আন্তর্জাতিক সিনেমার যে ইমেজ, সেটা আসলে তৈরি করতে চাই। বিশ্ব দরবারে আমরা বাংলা কন্টেন্ট নিয়ে, বাংলা সিনেমার পতাকা নিয়ে হাজির হতে চাই। সে জন্য সবাইকে মিলে কাজ করতে হবে। আমার জীবন নিয়ে ভাবলে ইন্ডাস্ট্রির কাজ হবে না। কারণ, ইন্ডাস্ট্রিটা এখনো তৈরি হচ্ছে। আসলে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো অবকাঠামোই তৈরি হয়নি। বাংলা সিনেমা এবং চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে একটা ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে পারি আগামী ১০ বছর পর। যদি খেয়াল করা হয় ইতোমধ্যেই তা শুরু হয়েছে, যেমন ‘হাওয়া’ পরবর্তী সিনেমা ‘তুফান’, ‘তা-ব, ‘বরবাদ’সহ আরও কিছু সিনেমা। এক নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে বাংলা সিনেমার।

আগামীতে কি কাজ আসছে?

এখন ২০২৫ সাল। শিল্পীরা এখন নিজের কাজ নিয়ে ঢোল পিটায় না। কারণ, আমি যে সকল কাজ করি, ওই কাজগুলোতে একটা বড় বিনিয়োগ থাকে। প্রচারের একটা সময় এবং বাজেট রাখে। আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করল, আর আমি বলে দিলাম, বিষয়টি এ রকম না। ইন্ডাস্ট্রিতে এ রকম শিল্পীও আছে, যারা তার পরবর্তী কাজ বলতে চায় না। অনেকে আবার, ছয় বছর আগে একটা সিনেমা করছিল ওইটা প্রতিদিন পোস্ট দেয়।