ঢাকা মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫

পূর্বাচলে অবৈধ বালুর গদি পুনঃদখল

রাকিবুল ইসলাম, পূর্বাচল
প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৫, ০১:৫১ এএম


*** বালুনদী থেকে শীতলক্ষ্যা পর্যন্ত বালুর স্রোত, জনদুর্ভোগ চরমে

রাজধানী ঢাকার পাশের রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকা আবারও দখল করেছে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা। ০৪, ১৩ ও ১৪ নম্বর সেক্টরের বিস্তীর্ণ সরকারি জমি স্থানীয় প্রভাবশালীদের বালুর স্তূপে পরিণত হয়েছে। অনুমতি ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে চলা এই ব্যবসা সড়ক ধ্বংস করছে, ড্রেন বন্ধ করে দিচ্ছে এবং স্থানীয় জনজীবন ও শিক্ষার্থীদের বিপর্যস্ত করছে।

রাজউক সূত্রে জানা যায়, গত এপ্রিলের শেষে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের কাছে এসব গদি সরানোর নোটিশ পাঠানো হয়, কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা উপেক্ষা করে। বর্তমানে বালুনদীর পাড়ে (১৩ ও ১৪ নম্বর সেক্টর) এবং শীতলক্ষ্যার তীরে (৪ নম্বর সেক্টর) ড্রেজারের মাধ্যমে দিনরাত বালু উত্তোলন চলছে। ভারী ট্রাক চলাচলে সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে খানাখন্দ, বেড়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। 

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০২২ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অবৈধ কয়লা ও বালুর ব্যবসা চললেও রাজউকের অভিযানে গদি গুটিয়ে যায়। কিন্তু ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক ছত্র-ছায়ায় অন্তত ১৭টি অবৈধ বালুর গদি পুনঃদখল হয়।

বর্তমানে অলিউল্লাহ ভুট্টু, আনিছুর, লুৎফর, সুলতান, রিটন প্রধান, নজরুল, মামুন, ফারুক, জিল্লুর, মাসুদ বাবুল, শরীফ, সোহেল, সফিকুল, রাসেল, ইউসুফ, জুনায়েত, আরিফ, ওয়াসিম, শামিম মিয়া ও সরোয়ারসহ প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তি এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। উত্তোলন, মজুত, পরিবহন ও বিক্রয়, সবকিছুই সিন্ডিকেটের দখলে।

২৩নং পিতলগঞ্জ ও ব্রাহ্মণখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মীনা রানী ভৌমিক বলেন, ড্রেজারের বালু ড্রেনে জমে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই স্কুল চত্বরে পানি জমে টয়লেট অচল হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা জানান, ধুলা ও শব্দদূষণে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া যায় না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, অবৈধ বালুর গদির কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্তসহ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। রাজউকের চিঠি পেয়েছি, আগামী সপ্তাহে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

রাজউকের নতুন শহর প্রকল্পের পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম জানান, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। অবৈধ দখল রয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, খুব শিগগির আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পূর্বাচলের অবৈধ বালুর ব্যবসা এখন কেবল স্থানীয় দুর্ভোগ নয়, এটি পরিবেশ, অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর না হলে এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে।