বহুল প্রত্যাশিত সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে গত বছরের মে মাসে। কাজ শেষের দেড় বছর পরও এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৩০ শতাংশের মতো। কাজের শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম, কাজের ধীরগতি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি আজও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এতে প্রশাসনিক কার্যক্রমে যেমন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি সাধারণ সেবাপ্রার্থীরাও পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে।
উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, ৮ কোটি ১৪ লাখ ৩৪০ টাকা ব্যয়ে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ৪ তলাবিশিষ্ট বালাগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণকাজ পায় যশোরের মেসার্স এম আই অ্যান্ড একে (জেবি) নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২২ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি কাজ শুরু করা হয়। ২০২৪ সালের মে মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ। নির্ধারিত মেয়াদের প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ফলে প্রকল্প এলাকায় খুঁড়ে রাখা গর্তে পানি ও আবর্জনা জমেছে, রডে ধরেছে মরিচা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণকাজের শুরু থেকেই বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছে ঠিকাদার। মেয়াদোত্তীর্ণ সিমেন্ট ব্যবহার, মরিচাযুক্ত রড লাগানোসহ নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। আবার নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের গতি ছিল অত্যন্ত ধীর। একাধিকবার সময় বাড়ানো হলেও কাজের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। এ ছাড়া বিগত এক বছরের একাধিকবার কাজ শুরু করলেও নানা অনিয়মের কারণে এলাকাবাসী ও উপজেলা প্রশাসনের প্রতিবাদের মুখে কাজ বন্ধ করে চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে সেবাগ্রহীতারা অভিযোগ করে বলছেন, ভবনটি সম্পন্ন হলে তারা এক ছাদের নিচে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সেবা পেতে। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও কাজ শেষ না হওয়ায় এখনো তাদের পুরোনো স্থাপনায় সেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও তারা নির্ধারিত সময়সূচি মেনে কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। বিষয়টি ইতিমধ্যে উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে এবং দ্রুত অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ও অনিয়মের অভিযোগে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। এলাকাবাসী প্রয়োজনে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে দ্রুত নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে ভবনটি উদ্বোধনের মাধ্যমে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক কামাল পাশার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে কাজ সময়মতো করা সম্ভব হয়নি। তবে খুব শিগগিরই কাজ শুরু করব। এ সময় তিনি এ বিষয়ে নিউজ না করার অনুরোধ করেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও তারা নির্ধারিত সময়সূচি মেনে কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। বিষয়টি ইতিমধ্যে উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে এবং দ্রুত অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন