বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৫, ০১:৩৩ এএম

ঢেউয়ে বিলীন হচ্ছে টেংরাগিরি বন

বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৫, ০১:৩৩ এএম

ঢেউয়ে বিলীন হচ্ছে টেংরাগিরি বন

**** গত কয়েক বছরে সাগরে বিলীন প্রায় দুই হাজার একর বনভূমি
**** একমাত্র বনভূমি-সংলগ্ন সমুদ্রসৈকতটি বিলীন হওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে পর্যটন খাতে
**** ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা
**** ভাঙনে বনের ভেতরে প্রায় ৫০০ মিটার এলাকাজুড়ে সরে গেছে গাছের গোড়ার মাটি
**** বনবিভাগের অসাধু চক্রের সহযোগিতায় পাচার গাছ

বরগুনার বিস্তৃত উপকূলজুড়ে বঙ্গোপসাগরের ঢেউ ও তীব্র ভাঙনে বিলুপ্তির পথে টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। গত কয়েক বছরে ধারাবাহিক ভাঙনে সাগরে বিলীন হয়েছে প্রায় দুই হাজার একর বনভূমি। স্থানীয়দের আশঙ্কা, অব্যাহত ভাঙনরোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে অস্তিত্ব হারাবে জেলার বৃহত্তম ইকো পার্ক টেংরাগিরি বনাঞ্চল। দেশের একমাত্র বনভূমি-সংলগ্ন সমুদ্রসৈকতটি বিলীন হওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে পর্যটন খাতে। বনের সৌন্দর্য হারিয়ে পর্যটকের আনাগোনা কমে গেছে; এতে বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা, অনেকে গুটিয়ে নিচ্ছে তাদের ব্যবসা।

স্থানীয়ভাবে ‘ফাতরার বন’ নামে পরিচিত এই বনটি ষাটের দশকে গড়ে ওঠে ধুন্দল, কেওড়া, গেওয়া, হেতাল প্রজাতির পরিমাণ গাছ ঘিরে। বনটির আয়তন ১৩ হাজার ৬৪৭.০৩ একর। বনের একদিক রয়েছে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, মহিপুর ও আন্দারমানিক নদী, অন্যদিকে পাথরঘাটার লালদিয়া ও বরগুনার কুমিরমারা চর। পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর সাগর মোহনা ঘিরে গড়ে উঠলেও বনাঞ্চলটির দক্ষিণ দিকে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। স্বাসমূলীয় গাছের আধিক্যের কারণে ও সমুদ্রসৈকত তীরবর্তী হওয়ায় পর্যটকদের এটি অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে আসা পর্যটকরা ভিড় জমায় এই টেংরাগিরি ইকোপার্কে। বরগুনার তালতলীর এই বনভূমি সমুদ্রসৈকতে ঘিরে শুভ সন্ধ্যা সমুদ্রসৈকত ও নিদ্রার চর ডিসি পয়েন্ট পর্যটনদের আকর্ষণীয় স্থানে পরিচিত লাভ করছে। রাস পূর্ণিমা ঘিরে ডিসি পয়েন্টে মেলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে সপ্তাহব্যাপী।

২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর এই বনাঞ্চলের ওপর সরাসরি আঘাত হানে। সিডরের তা-বে এবং জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতবিক্ষত হয় হয় টেংরাগিরি বনাঞ্চল। সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয় বিস্তীর্ণ বনভূমি। পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড় আইলার, মহাসেনের আঘাতে ও সাগরের অতি উঁচু মাত্রার জোয়ারে বনটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে একের পর এক ভাঙনের হার বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এতে ধুন্দল, কেওড়া, গেওয়া, হেতাল ও রেন্ট্রি প্রজাতির বিপুল পরিমাণ গাছ ইতোমধ্যে নষ্ট হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের তীব্র আঘাতে বনের বিরাট অংশের গাছ উপড়ে মাটিতে পড়ে আছে। ভাটার সময় গাছগুলো দেখা গেলেও জোয়ারের সময় সেগুলো সাগরের পানিতে তলিয়ে যায়। ভারনে বনের ভেতরে প্রায় ৫০০ মিটার এলাকাজুড়ে গাছের গোড়ার মাটি সরে গেছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় উপড়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, বছরজুড়ে কোটি টাকার বনসম্পদ সাগরে ভেসে গেছে।

বনভূমি সঙ্কোচনের পাশাপাশি বনদস্যুদেরও চরম দৌরাত্ম্য রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। তাদের অভিযোগ, একশ্রেণির অসাধু চক্র দিনের বেলায় গভীর বনে গাছ কেটে রাতের অন্ধকারে ট্রলারে করে পাচার করছে। এসব গাছ ইটভাটা ও কাঠবাজারে চলে যায়। এমনকি উপড়ে পড়া গাছও অবৈধভাবে নিয়ে যাচ্ছে এই চক্রটি। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বনবিভাগের অসাধু চক্র। এ ছাড়াও বনভূমি দখল করতে বনে আগুন লাগিয়ে বনভূমি দখল করছে প্রভাবশালী মহল। তাদের দাবি প্রশাসন কঠোর নজরদারি করলে এবং ব্যবস্থা নিলে দ্রুত রক্ষা পাবে নয়নাভিরাম টেংরাগিরি ইকোপার্ক।

পটুয়াখালী বিভাগীয় সহকারী বন সংরক্ষক মো. আমির হোসেন জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিনষ্ট হওয়া গাছগুলো সরানো হচ্ছে না। এই মরা গাছগুলো ঢেউয়ের প্রভাব যাতে উপকূলে না পড়ে তার জন্য বনের ভেতর রাখা হয়। তবে অসাধু ব্যক্তিরা যে বন উজাড় করছে কিনা এ বিষয় আমার জানা নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তিনি আরও জানান, টেংরাগিরি বনের ভাঙনরোধে নতুন করে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়া কমাতে ঝাউসহ অন্যান্য প্রজাতির গাছ ঘন করে লাগানো হচ্ছে।

স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা জানান, বনের বিলীন হওয়া উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে তুলবে। তারা টেকসই তটরক্ষা বাঁধ ও জোরদার নজরদারির দাবি জানিয়েছেন। দেশের অন্যতম এই উপকূলীয় বনটিকে টিকিয়ে রাখতে এখনই জরুরি এবং সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন, এমন অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!