- ঘুষ, হয়রানি আর খারাপ আচরণে অতিষ্ঠ সেবাপ্রার্থীরা
- ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ
- অভিযোগ পেয়েছে উপজেলা প্রশাসন; তদন্তে প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস
গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঘুষ লেনদেন, নামজারি প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে জটিলতা সৃষ্টি এবং সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ভারপ্রাপ্ত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা) আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় দুই মাস আগে সফিপুর ভূমি অফিসে যোগদানের পর থেকেই আব্দুল জব্বার বিভিন্ন ধরনের অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।
নামজারির আবেদন প্রক্রিয়ায় ঘুষ না দিলে আবেদনের প্রতিবেদন ‘বাতিল’ করে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কৌচাকুড়ি গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমি নামজারির আবেদন করেছিলাম, কিন্তু চাহিদামতো ঘুষ না দেওয়ায় আমার আবেদন বাতিলের প্রতিবেদন দেওয়া হয়।’
একই অভিযোগ করেন তানভীর হোসেন। তিনি জানান, তার আবেদন নং-১২৭৬৬০০৪, নামজারি মামলা নং-২৫৫৩/২৫-২৬ ঘুষ না দেওয়ায় বাতিল করা হয়। এ ছাড়া মামলা নং-৪৩৫৯/২৫-২৬ ও ৪৯০৬/২৫-২৬-এর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। অথচ ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী নামজারি আবেদন বাতিল করার সুযোগ নেই।
এ ছাড়া ভূমি উন্নয়ন কর আদায়েও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। কৌচাকুড়ি মৌজার ২৫-১৮৯৯০ নম্বর খতিয়ানের ৪৪ শতাংশ কৃষিজমির জন্য তিনি দাবি করেন ৭৭ হাজার টাকা, কিন্তু জমির মালিক ২৭ হাজার ৮০০ টাকা প্রদান করলেও মাত্র ১ হাজার ৩৭৫ টাকার রসিদ পান। দাখিলাটি যাচাই করে দেখা যায়, ৪৯ বছরের খাজনার স্থলে মাত্র ১৪ বছরের টাকা গ্রহণ করা হয়, ফলে বাকি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গেলে অফিসে বেশ কয়েকজন সেবাপ্রার্থীর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিযোগ করেন, ‘ঘুষ ছাড়া এই অফিসে কোনো কাজ হয় না।’
রাশেদ নামে এক ব্যক্তি জানান, তার খাজনা ২০২৪ সাল পর্যন্ত পরিশোধ করা থাকলেও অনলাইনে ১৩ বছরের বকেয়া দেখাচ্ছে। আবার কৃষিজমির খাজনা আদায়ে আবাসিক হারে দাবি তোলা হয়েছে।
এমন অভিযোগে অতিষ্ঠ হয়ে নাজনীন আক্তার নামে এক নারী গত ২৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগে বলা হয়, আব্দুল জব্বার তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের কাছ থেকেই টাকা আদায় করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে ‘শত শত অভিযোগ রয়েছে।’
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আব্দুল জব্বার সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহম্মেদ বলেন, ‘আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

