বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


গুরুদাসপুর (নাটের) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৫, ০১:৫২ এএম

সার ডিলার সিন্ডিকেটে দিশাহারা কৃষক

গুরুদাসপুর (নাটের) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৫, ০১:৫২ এএম

সার ডিলার সিন্ডিকেটে  দিশাহারা কৃষক

দেশের কৃষি ভান্ডারখ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের গুরুদাসপুর এখন রবিশস্যের ভরা মৌসুম। উপজেলার বিভিন্ন মাঠে শিতকালীন ফসল উৎপাদনে চলছে কৃষকদের ব্যস্ততা। কোথাও চলছে বীজ বপন, কোথাও চারা রোপণ। আবার কোথাও জমি তৈরিতে ব্যস্ত কৃষকেরা। তাদের কাজে অহরহ প্রয়োজন হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রাশায়নিক সার। কিন্তু সার সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ছেন তারা।

একদিকে সারের দাম সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি রাখা হচ্ছে, অন্যদিকে নির্ধারিত স্থানে গিয়েও সার পাচ্ছেন না তারা। বিশেষ করে সার ডিলারদের সিন্ডিকেটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। এ থেকে রেহাই পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন সিন্ডিকেটের কবলে পড়া কৃষকেরা।

উপজেলা বিসিআইসি ডিলার, বিএডিসি ও সার ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, সরাসরি কৃষকের কাছে সার বিক্রি করার নিয়ম থাকলেও অসাধু ডিলাররা সার উত্তোলনের পরপরই তা অতিরিক্ত দামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে গোপনে বিক্রি করে দেন। সার ডিলার ও খুচরা বিক্রেতা মিলে তৈরি হয়েছে সিন্ডিকেট। ফলে কৃষকেরা ডিলারদের কাছে গিয়ে সরকারনির্ধারিত দামে সার না পেয়ে বাধ্য হয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দামে সার কিনছেন। এর মধ্যে কিছু কিছু ডিলার সার গোপন গুদামে মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। আবার কোনো কোনো ডিলার অধিক লাভে জেলার বাইরেও সার পাচার করছেন।

দাম বেশি রাখার কারণ হিসেবে সারের সংকটকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে কৃষি বিভাগ বলছে, সারের কোনো সংকট নেই, রবি মৌসুমে সারের পর্যাপ্ত বরাদ্দ আছে।

কৃষকদের দাবি, অসাধু সার ডিলারের সিন্ডিকেটের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। টাকা দিয়েও সঠিক সময়ে চাহিদামতো সার পাচ্ছেন না তারা। আবার পেলেও বস্তাপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দাম সার কিনতে হচ্ছে তাদের। ডিলাররা অতিরিক্ত লাভের আশায় পরিকল্পিত সিন্ডিকেট করে রেখেছেন, যার প্রভাব পড়ছে পুরো কৃষিব্যবস্থার ওপর।

এদিকে স্থানীয় কৃষি অফিস চলতি রবি মৌসুমে সারের কোনো সংকট না থাকার কথা বললেও বাস্তবের সঙ্গে আকাশ-পাতাল ব্যবধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। সার সিন্ডিকেট চক্রে কৃষি কর্মকর্তা ও প্রশাসন জড়িত থাকায় তাদের ওপর কানো নজরদারি করা হয়নি। বরং নীরবে চলছে কৃষি খাতে সিন্ডিকেট, জিম্মি হচ্ছেন কৃষকেরা। উপজেলার বেড়গঙ্গারামপুর এলাকার কৃষক আলতাব আলী জানান, তিনি তিন বিঘা জমির রোপা আমন ধান কাটার পর সেই জমিতে রসুন রোপণ করেছেন। রোপণের আগেই জমি প্রস্তুত করতে দিতে হয়েছে টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সার। তবে সার কিনতে গিয়ে বাড়তি দামের কারণে বিপাকে পড়েছেন তিনি।

একই এলাকার মেছের উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ডিলারের কাছে সার কিনতে গেলে সার গোডাউনে থাকা সত্ত্বেও বলে, সার নাই। আর গোডাউন সব সময় মূল ব্যবস্যাপ্রতিষ্ঠান থেকে দূরে রাখা হয়, যাতে কেউ গোডাউনে গিয়ে যাচাই-বাছাই করতে না পারে। আবার সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম দিলে তখন কোথা থেকে যেন সার হাজির হয়ে যায়। চলতি মৌসুমে সারের অতি প্রয়োজন থাকায় আমরা তাদের কাছে অসহায়। দিন শেষে তাদের ফাঁদে পা দিয়ে অতিরিক্ত দামেই সার কিনতে হচ্ছে।

উপজেলার রশিদপুর গ্রামের কৃষক লিটন রহমান জানান, তিনি সার কিনতে গেলে বস্তাপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ওই বিষয়ে কৃষি বিভাগে জানিয়েও কোনো সুফল পাননি।

কৃষকদের দাবি, সারের এই সিন্ডিকেট ভাঙা জরুরি। আর তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে ফসলের দাম বাড়াতে হবে।

তবে সার ডিলারদের দাবি, তারা চাহিদার তুলনায় সার কম বরাদ্দ পাচ্ছেন। গুদাম থেকে সার উত্তোলন করে দোকানে আনার এক সপ্তাহের মধ্যেই সব বিক্রি হচ্ছে। কৃষক সার কিনতে এসে না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন। এমনকি অনেক কৃষকের সঙ্গে বাগবিত-াও হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুরুদাশপুরের বিসিআইসির এক সার ডিলার বলেন, কার্ডধারীদের কাছে সরকারি দামে সার বিক্রি করা হয়। তবে খুচরা বিক্রেতারা কৃষকের কাছে কীভাবে সার বিক্রি করেন, তা তদারক করার সুযোগ নাই তাদের।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে এম রাফিউল  ইসলাম  বলেন, ‘আমার জানামতে, সারের কোনো সংকট নেই বা কেউ দাম বেশি নিচ্ছে না। তার পরও যদি কেউ বেশি দাম নিয়ে থাকে, তাহলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। কেউ যদি প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত সার কেনে, তাদের বিরুদ্ধেও  আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। এ  ছাড়া  মনিটরিং কার্যক্রম আরও জোরদার করছি। আমাদের মনিটারিং অব্যাহত  থাকবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাবিবুল ইসলাম খান জানান, ফসল উৎপাদনের অন্যতম উপকরণ সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। দামও কৃষকের নাগালের মধ্যে। সার নিয়ে কোনো অভিযোগ তার কাছে আসেনি। যদি কোনো অভিযোগ আসে, তাহলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!