ঢাকা শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

এক নৌকার কাঁধে কয়েক গ্রামের জীবনযাত্রা

জি.এম স্বপ্না, সলঙ্গা
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০১:৫৩ এএম

সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার চরবেড়া গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা ঝপঝপিয়া নদীর খেয়া নৌকা। নদীর দুপাড়ে দড়ি টেনে নৌকা চালিয়ে প্রতিদিনই পারাপার হতে হয় স্কুলশিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে একটি সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয়রা, কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন হয়নি সেই দাবি।

ঝপঝপিয়া নদী ভরপুর থাকে বর্ষায় ও আরও কয়েক মাস। শুকনো মৌসুমে কিছুটা পানি কমলেও চলাচলের উপায় একই থাকে, খেয়া নৌকা বা বাঁশের সাময়িক সাঁকো। বর্তমানে সাঁকো না থাকায় আবারও নৌকাই একমাত্র ভরসা।

চরবেড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও চরবেড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্বপাড়ের শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়মিত এই নৌকায় পারাপার হয়। বর্ষায় ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়; অনেক অভিভাবক সন্তানদের সঙ্গে নিজেরাই নৌকা পার হন।

নদীর দুপাড়ে বাঁধা রয়েছে মোটা দড়ি। মাঝি না থাকলে যাত্রীদের রশি টেনে নৌকা চালাতে হয় নিজেরাই। প্রায় দেড় যুগ ধরে মাঝির দায়িত্ব পালন করছেন ষষ্ঠি চন্দ্র তরুণী দাস। তিনি নগদ ভাড়া ও নদীর দুপাড়ের বাসিন্দাদের কাছ থেকে বাৎসরিক ধান নিয়ে খেয়া সেবা দিয়ে আসছেন। বছরে প্রায় ২৫ মণ ধান পান বলে জানান তিনি।

চরগোজা গ্রামের বাসিন্দা ইছাহাক মিয়া, তাইজুল ইসলামসহ অনেকেই বলেন, ‘স্কুল-কলেজ, বাজার বা হাসপাতালে যেতে হলে আমাদের এই নৌকা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

চরবেড়া কবরস্থানের সামনে থেকে খেয়াঘাট হয়ে নদী পার হলেই ভরমোহনী থেকে এলজিইডির সড়ক বোয়ালিয়া পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সেতু হলে সলঙ্গা-ধামাইলকান্দি আঞ্চলিক সড়ক থেকে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে, যা এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কে. এম ওবায়দুল হক সুজন বলেন, ‘এখানে একটি সেতু হলে কৃষক, শিক্ষার্থীসহ সবাই উপকৃত হবেন।’ ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মন্টু বলেন, ‘সেতু হলে নদীর দুপাড়ের মানুষের যাতায়াত সহজ হবে।’

ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সূবর্ণা ইয়াসমিন সুমী জানান, ‘সেতু নির্মাণ হলে কৃষকরা সহজেই ফসল বাজারে নিতে পারবেন। যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন হবে।’

এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী এম শহিদুল্লাহ বলেন, ‘চরবেড়া খেয়াঘাটে সেতু নির্মাণকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি। পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ মিললেই কাজ শুরু হবে।’ স্থানীয়দের আশা, বহু বছরের ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে সেতু নির্মাণ বাস্তবে রূপ নিলে ঝপঝপিয়া নদী পারাপারের কষ্ট আর থাকবে না।