ঢাকা শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

যশোর জেনারেল হাসপাতাল

হাসপাতাল ঘিরে নারী চোর সিন্ডিকেট

বিল্লাল হোসেন, যশোর
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০২:২৩ এএম

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ঘিরে নারী চোর সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা আস্তানা গেড়েছে সদর উপজেলার রূপদিয়া এলাকায়। ২৬ দিনে হাসপাতাল থেকে পুলিশ ও জনতার হাতে ১০ সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার পর এমন তথ্য সামনে এসেছে। এখন পর্যন্ত যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের অধিকাংশ সদস্যের বসবাস রূপদিয়ায়। তবে তারা সেখানেস্থায়ীভাবে বসবাস করেন না। তারা পাবনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে রূপদিয়ায় এসে ভাড়া বাড়িতে থাকেন।

এই নারী চোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা রোগী সেজে জেনারেল হাসপাতালে এসে রোগীদের মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ও সোনার গয়না হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের কবলে পড়ে সহজ-সরল রোগীরা প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ধরা পড়া নারী চোর সদস্যদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সিন্ডিকেট সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যেত বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, গত বুধবার সদর উপজেলার মাহিদিয়া গ্রামের মোহাম্মদ হোসেন আলীর স্ত্রী তমা খাতুন জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে আসেন। বেলা পৌনে ১১টার দিকে তিনি করোনারি কেয়ার ইউনিটের নিচতলায় ৬ নম্বর কক্ষে ডাক্তার দেখাবেন বলে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় রোগী সেজে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বন্যা খাতুন ও তানিয়া খাতুন তার (তমা খাতুন) কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা চুরি করে। এ সময় অন্য রোগীর লোকজন তাদের হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে জানা যায়, বন্যা পাবনার আমিনবাজার থানার কাশীনাথপুর গ্রামের আল আমিনের স্ত্রী ও তানিয়া একই গ্রামের রায়হান হোসেনের স্ত্রী। তারা দুজনই যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া তেল পাম্প এলাকায় বসবাস করতেন।

গত ৯ নভেম্বর লেবুতলা ইউনিয়নের দলেন নগর গ্রামের মহিদুল ইসলামের স্ত্রী আছিয়া খাতুন জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখানোর জন্য ৬ নম্বর কক্ষের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় রোগী সেজে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সদর উপজেলার রূপদিয়া তেল পাম্প এলাকার মহিদুল ইসলামের স্ত্রী ঝর্ণা খাতুন ও মন্টু মিয়ার স্ত্রী জুলেখা খাতুন তার (আছিয়া) গলা থেকে সোনার চেইন ছিঁড়ে নেয়। ঝর্ণা ঘটনাটি উপস্থিত রোগীদের জানালে তারা ওই দুই নারীকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন। তারাও পাবনা থেকে এসে রূপদিয়ায় থাকেন।

গত ২ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে নারী চোর চক্রের সদস্য জান্নাত খাতুনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তিনি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি গ্রামের হাসান মোল্যার স্ত্রী। তিনিও সদর উপজেলার রূপদিয়ার চাউলিয়া গেট এলাকায় বসবাস করতেন। পুলিশ তার ব্যাগ থেকে নগদ ২ হাজার ১০৪ টাকা ও তিনটি ব্যাগ উদ্ধার হয়। জান্নাত আরও একবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। 

গত ১৮ অক্টোবর বাঘারপাড়া উপজেলার পাঠান পাইকপাড়া গ্রামের ইউসুফ আলীর স্ত্রী ফিরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৬ নম্বর কক্ষে ডাক্তার দেখাতে আসেন। এ সময় তার ব্যাগ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা হাতিয়ে নেন সাথী বেগম ও রিতা খাতুন। তবে হজম করার আগেই দায়িত্বরত চিকিৎসক তাদের দুজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন। সাথী সদর উপজেলার চুড়ামনকাটির ছাতিয়ানতলা গ্রামের মৃত মিরাজ মোল্যার স্ত্রী ও রিতা খুলনার পাইকগাছার দক্ষিণ বড়ডাল গ্রামের মৃত বারেক সর্দারের স্ত্রী।

সূত্র জানায়, নারী চোর চক্রের সদস্যরা রোগী সেজে স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে হাসপাতালে আসে। তারা গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল রোগীদের টার্গেট করে মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ও সোনার গয়না হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ২৬ দিনে চক্রের ১০ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে। ভিড়ের মধ্যে রোগী সেজে দাঁড়িয়ে থেকে তারা সাধারণ রোগীদের সর্বনাশ করে। হাসপাতালকে ঘিরে এই নারী চোর সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। চক্রের অধিকাংশ সদস্যের বাড়ি পাবনায়। তারা যশোর সদরের রূপদিয়ায় আস্তানা গেড়ে অপরাধ করে চলেছে। তাদের সাথে রয়েছে স্থানীয় কিছু নারী। 

হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য সোহেল রানা জানান, জেনারেল হাসপাতালকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে একটি নারী চোর চক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা রোগীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে ধান্দাবাজিতে লিপ্ত হয়। সহজ-সরল নারীদের টার্গেট করে গয়না, মোবাইল ফোন এবং পার্সে থাকা নগদ টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রটির প্রধান কৌশল। গত ২৬ দিনে চক্রের ১০ সদস্যক গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চুরি রোধে বহির্বিভাগে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন জানান, জেনারেল হাসপাতালে ধরা পড়া নারী চোর চক্রের সদস্যরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চুরি কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলার পর আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। চক্রের অন্য সদস্যদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে।