ঢাকা বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

শোকে অসুস্থ মা কুকুর

৮ কুকুর ছানাকে বস্তাবন্দি করে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা

পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ০৪:০৯ এএম

পাবনার ঈশ্বরদীতে আটটি কুকুর ছানাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নেটিজেনরা।

জানা যায়, গত রোববার কোনো একসময় কুকুর ছানাগুলোকে বস্তাবন্দি করে পানিতে ফেলে দেন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী নাজিনা আক্তার। পরে মা কুকুর ছানাগুলোকে খুঁজে না পেলে শেষ পর্যন্ত সোমবার উপজেলার পুকুর থেকে বস্তাবন্দি ছানাগুলোর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের একটি কোনায় থাকত এই কুকুরটি। কুকুরটি বিশ্বস্ত হওয়ায় মানুষজন এটিকে খুব ভালোবাসত। উপজেলাবাসী তার নাম দিয়েছিল ‘টম’। এক সপ্তাহ আগে টম আটটি বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চাগুলো না পেয়ে গত রোববার সকাল থেকে পাগলপ্রায় অবস্থায় কান্নাকাটি আর ছোটাছুটি করতে দেখা যায় মা কুকুরকে। তখন উপজেলাবাসীর মনে প্রশ্ন জাগে, যে কুকুরটি ছিল শান্ত হঠাৎ করেই অশান্ত হয়ে উঠল কেন? উপজেলা ক্যাম্পাসে বসবাসরতরা মনে করেন, ক্ষুধায় হয়তো এমন করছে। কিন্তু তাকে খাবার দিলেও খায়নি। সারা রাতই কুকুরটিকে অফিসার্স ক্লাব এবং আবাসিক এলাকার বিভিন্ন বাসার দরজায় দরজায় ঘুরতে দেখা গেছে।

এরপর বাচ্চাগুলোর খোঁজ শুরু করেন উপজেলা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একপর্যায়ে সোমবার সকালে জানা যায়, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্মকর্তার স্ত্রী বস্তাবন্দি করে আটটি কুকুরের বাচ্চা পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়েছেন। পরে পুকুর থেকে মৃত কুকুর ছানাগুলো উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনার কয়েকটি ছবি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করে। জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নেটিজেনরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, কুকুর ছানাগুলোকে হত্যা নিঃসন্দেহে অপরাধ। যে নিরীহ পশুকে হত্যা করতে পারে সে মানুষকেও খুন করতে পারে। জীবিত কুকুর ছানাকে এভাবে নির্মমভাবে হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তারা।

অভিযুক্ত নাজিনা আক্তারের স্বামী হাসানুর রহমান নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী এ কাজ করেছে। তিনি মানসিকভাবে একটু অসুস্থ। এ ঘটনায় আমরা মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বলেন, এটা খুবই অমানবিক। মা কুকুর এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে আমাদের লোকজন চিকিৎসা দিয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার অফিসের সবার সাথে বসে ছিলম। তদন্ত করে জানা গেছে, আমাদের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী নাজিনা আক্তার এই কাজটি করেছেন। আমি নয়নকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তার স্ত্রী মানসিকভাবে একটু অসুস্থ। আমি তাদের ক্যাম্পাসের ভেতরের বাসা ছেড়ে দিতে বলেছি। তারা বাসা ছেড়ে ক্যাম্পাসের বাইরে চলে গেছে। মা কুকুরটি একটু অসুস্থ, তার চিকিৎসা চলছে।