সেনেগাল ও তিউনিশিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের জন্য জাতীয় দল ঘোষণা করেছে ব্রাজিল। দলে নতুন মুখ লুচানো জোবা। এই ফুটবলারের পেছনের গল্পটা স্বাভাবিক খেলোয়াড়ের মতো নয়। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ঠিকমতো পড়ালেখাও করতে পারেননি জোবা। জীবনের সেই কঠিন সময়ের গল্প নিজেই শোনালেন এই ফুটবলার। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবার থেকে উঠে আসা, জীবনযুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকা এবং ফুটবলের আলোয় নিজের জীবনকে আলোকিত করা, জোবার জীবন-গল্পে আছে এর সবকিছুই। প্রথমবার জাতীয় দলে যোগ দিয়ে শোনালেন পেছনে ফেলে আসা সেই সময়ের কথা। নতুন চ্যালেঞ্জ জয়ের অফুরন্ত আত্মবিশ্বাসও ফুটে উঠল এই লেফট-ব্যাকের কণ্ঠে। প্রীতি ম্যাচের জন্য ব্রাজিলের দল ঘোষণা করার পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে; পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সোফায় বসে টিভিতে ব্রাজিল কোচ কার্লো আনচেলত্তির দল ঘোষণা দেখছিলেন লুচানো জোবা, তার নাম কোচের কণ্ঠে উচ্চারিত হতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন সবাই। সেই মুহূর্তের উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনার পারদ এখন নেমেছে, তবে রোমাঞ্চটা রয়ে গেছে আগের মতোই।
ক্লাব ফুটবলে আলো ছড়িয়ে জাতীয় দলের কড়া নাড়তে পেরেছেন, তাতে মূল লক্ষ্যের প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে। এখন আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ সামলে, বুঝতে পারছেন জোবা। দেশ থেকে এসে গত সোমবার তিনি পা রেখেছেন লন্ডনে, যোগ দিয়েছেন জাতীয় দলের সঙ্গে। সকালে এসে বিকালে আর্সেনালের ক্লাবের অনুশীলন মাঠেও অনুশীলন করেছেন। আর্সেনালের এমিরেটস স্টেডিয়ামে আগামী শনিবার সেনেগালের মুখোমুখি হবে জোবা ও তার সতীর্থরা। ব্যস্ত দিনের ফাঁকে সিবিএফ টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অল্প কথায় জীবনের স্বপ্ন পূরণের গল্প শোনালেন জোবা। শুরুতে স্বপ্ন পূরণের প্রথম দিনের উচ্ছ্বাস ঝরে পড়ল তার কণ্ঠে, ‘আমার জন্য এটা খুব বিশেষ একটা দিন, (জাতীয় দলে) আমার প্রথম ডাক পাওয়া, আমার প্রথম অনুশীলন সেশন। জীবনের খুব স্মরণীয় একটা দিন হয়ে থাকবে।
অসাধারণ সব খেলোয়াড়ের সঙ্গে অনুশীলন করতে পারা আমার জন্য সম্মানের। ঈশ্বর আমাকে যা দিচ্ছেন, সে জন্য তাকে ধন্যবাদ। এখন আমি যেন এই সুযোগটা সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে পারি।’ জাতীয় দলে পৌঁছাতে কত না ঝড় সামলাতে হয়েছে, দিতে হয়েছে কত পরীক্ষা, লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরে সবকিছুই সার্থক মনে হচ্ছে জোবার, ‘মাথার মধ্যে যেন একটা সিনেমা চলছিল, জাতীয় দলে আসার স্বপ্ন দেখার শুরুর দিন থেকে টিভিতে আমার নাম শোনার দিন পর্যন্ত, যেদিন থেকে ফুটবল খেলা শুরু করেছি, যেদিন থেকে সেহা তালিয়াদেতে অনুশীলন শুরু করেছি, যেদিন থেকে আমি স্পোর্টের যুব প্রকল্পে যোগ হয়েছি, সেই দিন পর্যন্ত যখন আমি পেশাদার ফুটবলার হয়ে উঠলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় দলের তালিকায় আমার নাম দেখতে পেয়ে মনে হচ্ছে ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যত সমস্যার মধ্য দিয়ে গিয়েছি এবং যা কিছু অর্জন করেছি, তার সবকিছুই সার্থক।’ রেসিফে শহরের জাবুয়াতো দস গুয়ারারাপিস অঞ্চলে জন্ম ও বেড়ে ওঠা জোবার। অল্প বয়সে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেননি তিনি। ১৫ বছর বয়সে যখন কোনো এক ক্লাবের যুব দলে ঢোকার চেষ্টায় ছিলেন, তখনো তাকে দাদার সঙ্গে কাজ করতে হতো। এ কারণে পড়ালেখাও ঠিকমতো করতে পারেননি জোবা।
এখন অবশ্য পেছনে তাকিয়ে সে জন্য কষ্ট অনুভব করেন না তিনি, বরং নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করেন। জোবা বলেন, ‘আমার দাদা ট্রাকে মাল ওঠানো-নামানোর কাজ করতেন। আমরা যেখানে থাকতাম, সেখানে যখনই কোনো ট্রাক আসত, তখন কাজের জন্য কাউকে তার প্রয়োজন হতো, তিনি আমাকে ডাকতেন। আমরা খুব সকালে বেরিয়ে পড়তাম এবং রাত করে বাড়ি ফিরতাম। তাই মাঝেমধ্যে স্কুলে যাওয়ার সময় থাকত না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমি নিশ্চিত, সেই সবকিছুই সার্থক। আজ আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই। আমি আমার পরিবারকে আগের চেয়ে অনেক ভালো জীবন দিতে পেরেছি এবং এখন আমি জাতীয় দলে।’ জোবার কাছে জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটাই স্বপ্নের মতো। সামনের চ্যালেঞ্জ সামলে আরও অনেকটা পথ এগিয়ে যেতে চান তিনি।
জোবা বলেন, ‘আমরা অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি পার করে এসেছি। আর যখন জাতীয় দলে আসতে পেরেছি, কেবল এখানে আসতে পারাই নয়, বরং যখন থেকে আমি পেশাদার ফুটবলার হয়ে উঠেছি এবং পরিবারকে সাহায্য করতে পেরেছি, ঠিক তখনই আমার একটা স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেছে। তখনই নিজের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, যত সমস্যাই আসুক, তা কাটিয়ে ওঠার সার্থকতা আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, জীবনে যা কিছু পার করে এসেছি, সে জন্য এখন আমি আরও গর্বিত অনুভব করছি। আশা করি, এভাবে সামনে আমি আরও বেড়ে উঠব, উন্নতি করব।’

