শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মিনহাজুর রহমান নয়ন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০১:৩৪ এএম

রাজবাড়ি

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শহর

মিনহাজুর রহমান নয়ন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০১:৩৪ এএম

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শহর

বাংলার বুকচিরে প্রবাহিত পদ্মা ও গড়াই নদীর স্নিগ্ধ আলিঙ্গনে গড়ে উঠেছে রাজবাড়ী জেলা। যার নামেই মধ্যে লুকিয়ে আছে রাজকীয় ঐতিহ্যের গৌরবগাথা। ইতিহাস, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও নদী সব মিলিয়ে রাজবাড়ী যেন এক জীবন্ত ক্যানভাস। পদ্মার পলিমাটিতে জন্ম নেওয়া এই জনপদে যেমন আছে প্রাচীন জমিদারির চিহ্ন, তেমনি আছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি আর নদীকেন্দ্রিক জীবনের ঢেউয়ে শব্দ।

রাজবাড়ীর ইতিহাসের কথা

রাজবাড়ী জেলা পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত। একসময় এই অঞ্চল পরিচিত ছিল ‘রেলের শহর’ ও ‘চমচমের শহর’ নামে। পদ্মার ভাঙনে গোয়ালন্দ থেকে রেলওয়ের দপ্তরগুলো রাজবাড়ীতে স্থানান্তরিত হওয়ায় এই পরিচিতি পায়। ‘রাজবাড়ী’ নামটির উৎপত্তি নিয়েও আছে এক রাজকীয় কাহিনি। কথিত আছে, একসময় নাটোরের রাজার জমিদারি ছিল এ অঞ্চলে। রাজার স্নানমঞ্চ, দোলমঞ্চ ও অন্যান্য স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ আজও সেই ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে। রাজবাড়ীর মাটিতে তাই আজও টিকে আছে জমিদারি ঐতিহ্যের গর্বিত স্মৃতি।

দুই নদীর মেলবন্ধনে গড়া রাজ্য

রাজবাড়ীর উত্তরে পাবনা, দক্ষিণে ফরিদপুর ও মাগুরা, পূর্বে মানিকগঞ্জ আর পশ্চিমে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ। পদ্মা ও গড়াই দুটি নদীর মিলনে গড়ে উঠেছে এই উর্বর জনপদ। পলিমাটির দান আর নদীর স্রোতে এখানে কৃষি, মৎস্য ও বাণিজ্যের সমৃদ্ধ ইতিহাস। নদীভিত্তিক জীবন ও সংস্কৃতি রাজবাড়ীর মানুষকে করেছে প্রাণবন্ত, পরিশ্রমী ও অতিথিপরায়ণ। এই নদীতে এক সময় ভারতের জাহাজও নোঙর ফেলত।

বালিয়াকান্দি: সাহিত্য ও ইতিহাসের মেলবন্ধন

রাজবাড়ীর সাহিত্যিক হৃদয় বলা হয় বালিয়াকান্দিকে। এখানেই জন্ম নিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী মীর মশাররফ হোসেন। পদমদী গ্রামের তার স্মৃতি কেন্দ্র সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য এক ঐতিহাসিক গন্তব্য। এখানে সংরক্ষিত আছে তার ব্যবহৃত সামগ্রী, বই, পা-ুলিপি ও আলোকচিত্র। এ উপজেলা ঐতিহাসিকভাবেও সমৃদ্ধ। এখানকার শাহ পাহলোয়ানের মাজার মুঘল আমলের এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনা। ১৬০৭ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে ইরাক থেকে আগত সৈয়দ শাহ পাহলোয়ানের পরিবারকে পদমদীতে জমি দান করা হয়, যার স্মৃতিতে নির্মিত হয় এই মাজার।

প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ঐতিহ্য

রাজবাড়ীতে ইতিহাসের ছাপ ছড়িয়ে আছে প্রায় প্রতিটি কোণে। আরও কিছু জায়গা আছে দেখার মতো তা হলো নলিয়া জোড় বাংলা মন্দির; বালিয়াকান্দি উপজেলার নলিয়া গ্রামে অবস্থিত এই যুগল মন্দির রাজা সীতারাম রায় ১৬৫৫ খ্রিষ্টাব্দে উড়িষ্যার গৌরীয় রীতিতে নির্মাণ করেন। এর একটি মন্দির আজও টিকে আছে, যা প্রতœতত্ত্বপ্রেমীদের আকর্ষণের কেন্দ্র। কল্যাণ দীঘি; ইসলামপুর ইউনিয়নের বিশাল ও প্রাচীন এই দীঘি শুধু পানি নয়, ধারণ করে শত বছরের স্মৃতি। এর নীরব জলরাশি ও শান্ত পরিবেশ ভ্রমণপিপাসুদের মন কেড়ে নেয়। সমাধিনগর মঠ; জঙ্গল ইউনিয়নে অবস্থিত এই মঠ রাজবাড়ীর প্রাচীন ধর্মীয় ও স্থাপত্য ঐতিহ্যের সাক্ষী।

ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থান

রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলাদিপুর গ্রামে অবস্থিত জামাই পাগলের মাজার জেলার অন্যতম ধর্মীয় কেন্দ্র। এখানে মুর্শিদ জামাই পাগল (রহ.), নুর বাকের শাহ ও গৌরী পাগলীর কবর রয়েছে। প্রতিবছর এখানে হাজারো ভক্তের আগমন ঘটে। সদর উপজেলার বেলগাছিতে অবস্থিত রথখোলা সানমঞ্চ নাটোরের রাজার জমিদারির নিদর্শন হিসেবে আজও দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। শহরের রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের লাল ভবন ইতিহাস ও স্থাপত্যের এক অনন্য প্রতীক, যা আজও শিক্ষা ও ঐতিহ্যের ধারক।

নদী, রেল ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি

রাজবাড়ীর সবচেয়ে ঐতিহাসিক স্থান গোয়ালন্দ ঘাট। একসময় এটি ছিল ‘বাংলার প্রবেশদ্বার’। পদ্মা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে এখনো মনে হয়, এখান দিয়েই যেন প্রবেশ করা যায় ইতিহাসের গর্ভে। পাংশা উপজেলার ব্রিটিশ রেল সেতু ব্রিটিশ আমলের নির্মাণশৈলীর এক নিদর্শন, যা আজও ব্যবহৃত হচ্ছে। আর রাজবাড়ী বধ্যভূমি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এক নীরব সাক্ষীÑ যা স্মরণ করিয়ে দেয় স্বাধীনতার জন্য এই অঞ্চলের ত্যাগ ও সংগ্রাম।

পদ্মা নদী ও পর্যটনের সম্ভাবনা

রাজবাড়ী কেবল একটি জেলা নয়; এটি ইতিহাস, নদী ও মানুষের হৃদয়ের গল্প। রাজাদের স্থাপত্য, সাহিত্যিকের স্মৃতি, মুক্তিযুদ্ধের বীরগাঁথা আর পদ্মার স্রোতে বয়ে চলা জীবনের সুর সব মিলিয়ে রাজবাড়ী যেন এক জীবন্ত রাজকীয় কাব্য।যে কেউ একবার রাজবাড়ীর মাটিতে পা রাখলে অনুভব করবেনÑ এ যেন বাংলার ঐতিহ্যের প্রাণস্পন্দন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!