দৃষ্টিনন্দন পোড়ামাটির শিল্প নয়াবাদ মসজিদ

বাংলাদেশের উত্তরের জেলা দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়াবাদ গ্রামে ঢেপা নদীর পশ্চিম তীরে দাঁড়িয়ে আছে মোঘল আমলের স্থাপনা নয়াবাদ মসজিদ, একটি স্থাপনা, যার সৌন্দর্য আপন মনেই আলোড়ন তুলবে। জেলা শহর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ মসজিদটি শুধু ইতিহাসের অংশই নয়, রূপ-লাবণ্যেরও এক অনন্য নিদর্শন।

যাত্রাপথেই মুগ্ধতা

দিনাজপুরের লিলির মোড় থেকে অটোরিকশা ভাড়া ১৫০ টাকায় রওনা দিলে ঢেপা নদী পার হয়ে মসজিদের পথে দু’ধারে বিশাল আমবাগান চোখে পড়বে। আমবাগানের ফাঁক গলে যখন প্রথমবার নয়াবাদ মসজিদ চোখে পড়ে, তখনই মন ভরে যায় অপূর্ব সৌন্দর্যে। দূর থেকে দেখা ছবির তুলনায় বাস্তবটি যেন বহু গুণ বেশি মনোমুগ্ধকর।

ইতিহাস ও নির্মাণশৈলী

প্রায় ৩শ বছর আগে সম্রাট শাহ আলমের রাজত্বকালে, ১৭৯৩ সালে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। ধারণা করা হয়, কান্তজিউ মন্দির নির্মাণে নিযুক্ত মুসলিম স্থপতি ও শ্রমিকরা তাদের নামাজের জন্যই নয়াবাদ মসজিদ তৈরি করেন। পরবর্তীতে তারাই এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। প্রায় ১.১৫ বিঘা জমির ওপর নির্মিত তিন গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদের চার কোণে আছে চারটি অষ্টভুজ মিনার, প্রতিটির মাথায় ছোট গম্বুজ। পূর্বপাশে তিনটি প্রবেশদ্বার, যার মধ্যে মাঝেরটি তুলনামূলক বড়। প্রধান প্রবেশদ্বারের ওপর সংরক্ষিত আছে ফারসি ভাষার একটি ফলক। মসজিদের বাহিরের গায়ে পোরামাটির অসাধারণ টেরাকোটা ফলক ব্যবহার করা হলেও সময়ের কারণে অনেকটাই ক্ষয়প্রাপ্ত। বর্তমানে মোট ১০৪টি টেরাকোটা অংশ অবশিষ্ট রয়েছে। ভেতরে ও বাইরে একই রকম সমৃদ্ধ কারুকার্য। আকারে ছোট হওয়ায় ভেতরে দুই কাতার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের পূর্ব পাশে রয়েছে সুসজ্জিত ফুলের বাগান। সেখানে একটি কবর ফলকও আছে, যদিও কবরটি কার তা স্পষ্ট জানা যায়নি ধারণা করা হয় কোনো শ্রমিকের কবর।

ঢাকা থেকে কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে দু’ভাবেই যাওয়া যায়Ñ বাস অথবা ট্রেনে। বাসে  গেলে যাত্রা শুরু: গাবতলী বা কল্যাণপুর, ভাড়া: ৬০০-১৫০০ টাকা (এসি/নন-এসি অনুযায়ী)। আর ট্রেনে গেলে দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও একতা এক্সপ্রেসএ যেতে পারেন। অন্যান্য জেলা থেকে প্রথমে দিনাজপুরে এসে সেখান থেকে অটো বা প্রাইভেট গাড়িতে সহজেই পৌঁছানো যায়।

থাকার ব্যবস্থা

নয়াবাদ মসজিদের পাশেই কান্তনগর এলাকায় আছে একটি সরকারি রেস্টহাউস। এ ছাড়া দিনাজপুর শহরেও ভালো থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যটন মোটেল ও রামসাগর বাংলো তে থাকতে পারবেন। নয়াবাদ মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়; এটি ইতিহাস, স্থাপত্য, প্রকৃতি আর শান্তির এক অনুপম সমাহার। ঢেপা নদী, আমবাগানের পথ, আর চোখজুড়ানো কারুকার্যে ভরা ছোট্ট এই মসজিদটি আপনাকে এনে দেবে এক ভিন্নতর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা মনকাড়া, নান্দনিক এবং স্মরণীয়।