রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


নোয়াখালী (সুবর্ণচর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ০৬:০১ পিএম

নোয়াখালীতে শিশু ধর্ষণের চেষ্টা, সালিশে ৩ লাখ টাকায় রফা

নোয়াখালী (সুবর্ণচর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ০৬:০১ পিএম

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটায় এক মাদ্রাসাছাত্রী (৯) ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ না করে স্থানীয় প্রভাবশালী বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের তত্ত্বাবধানে ১০ বেত্রাঘাত, চড়-থাপ্পড় এবং ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে চরবাটা ইউনিয়নের খাসেরহাট বাজারে এই সালিশ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

ভুক্তভোগী শিশুটি স্থানীয় খুরশিদিয়া নুরানী ইসলামিয়া মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা বিদেশে থাকেন।

অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন একই এলাকার বাসিন্দা।

স্থানীয়দের অভিযোগ অনুযায়ী, হেলাল উদ্দিন তার নাতনিকে মাদ্রাসা থেকে আনতে গিয়ে শিশুটিকে একা পেয়ে ২০ টাকা দেন এবং এরপর তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। শিশুটি চিৎকার করে বাড়িতে ফিরে তার মাকে বিষয়টি জানায়।

সালিশের উদ্যোগ ও প্রভাবশালী ভূমিকা

ঘটনার পরপরই শিশুটির পরিবার আইনি সহায়তা নিতে চাইলে খাসেরহাট বাজারের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মো. আব্দুর রহমান খোকন তাদের ‘থানা-পুলিশকে না জানানোর’ পরামর্শ দেন।

পরবর্তীতে উপজেলা জামায়াত আমির মাওলানা মো. জামাল উদ্দিন ও অন্যান্য বিএনপি নেতাদের নিয়ে সালিশ বৈঠক বসিয়ে ১০ বেত্রাঘাত, চড়-থাপ্পড় এবং ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সালিশে উপস্থিত থাকা এক বিএনপি নেতা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ‘বিএনপি নেতা আব্দুর রহমান খোকন বাজারের একজন বড় ব্যবসায়ী এবং এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকেই তার মাধ্যমে সালিশ-মীমাংসা করিয়ে থাকেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সালিশে প্যানেল চেয়ারম্যান মো. গোলাম মাওলা, জামায়াতের উপজেলা আমির মাওলানা মোঃ জামাল উদ্দিন, স্থানীয় ইমাম মাওলানা মো. আহসান উল্লাহ, মাওলানা রুহুল আমিন কামাল, প্রবীণ শিক্ষক মো. সেকান্দর আলমসহ মাদ্রাসার শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের উপস্থিতিতেই বিষয়টি মীমাংসা করা হয়।’

অভিযুক্তের বক্তব্য ও পাল্টা অভিযোগ

অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘চিহ্নিত কিছু স্থানীয় চাঁদাবাজ দীর্ঘদিন ধরে আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় পরিকল্পিতভাবে আমার উপর এই জুলুম করা হয়েছে। একটি মিথ্যা ঘটনাকে আমার উপর চাপিয়ে দিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মানসিক এবং শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। ওরা আমার কোনো কথা না শুনে আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। তাই চিকিৎসার জন্য আমি নোয়াখালীর বাইরে এসেছি। সুস্থ হয়ে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেব।’

হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী জোবায়দা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী সিএমএইচ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাকে পরিকল্পিতভাবে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়েছিলেন। আমাকে বললেন, খোকন ভাই নাকি আমার স্বামীকে ডাকছে। তাই আমি উনাকে ঘুম থেকে তুলে পাঠিয়েছি। শুরুতে আমি কাউকে কিছু বলিনি। বর্তমানে উনার শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা ও আঘাতের কারণে মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন।’

জোবায়দা খাতুন আরও বলেন, ‘তিনি যদি অন্যায় করতেন তাহলে আমাদের সমাজের লোকজন আছে, তাদের বলত, কিন্তু কেন আঘাত করা হলো? আঘাতের কারণে তিনি সেখানে বমিও করে দিয়েছেন। আমরা আমার স্বামীকে আঘাতকারীদের যথোপযুক্ত বিচার চাই।’

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য

সালিশের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন খাসেরহাট বাজারের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মো. আব্দুর রহমান খোকন।

এ বিষয়ে তিনি রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ‘এমন সালিশ আমাদের এলাকায় হয়েছে বলে জানি না। তবে আমি শুনেছি, অভিযোগকারী পক্ষ এবং অভিযুক্তের উপস্থিতিতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ উপস্থিত থেকে বিষয়টি সমাধান করেছেন।’

এদিকে সালিশের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চরবাটা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. গোলাম মাওলা।

তিনি বলেন, ‘শিশুটিকে ধর্ষণ চেষ্টার সময় যে ২০ টাকার নোট দিয়ে প্রলোভন দেখিয়েছে, সেটি নিয়ে সালিশে দেখানো হয়েছে। সবার সর্বসম্মতিক্রমে ৩ লাখ টাকা ও ১০ বেত্রাঘাত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।’

সালিশে উপস্থিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সুবর্ণচর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা জামাল উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘আমি আসরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় খোকন ভাই আমাকে বসতে বলেছেন। আমি সালিশে ছিলাম, তবে বেশি কিছু আমি জানি না।’

পুলিশের অবস্থান

চরজব্বর থানার ওসি মো. শাহিন মিয়া বলেন, ‘ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে এমন কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Shera Lather
Link copied!