সোমবার, ০৩ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৫, ০৯:০২ পিএম

ছাত্রের বাসে ভাড়া কাটলেন ভাইস প্রিন্সিপাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৫, ০৯:০২ পিএম

ছাত্রের বাসে ভাড়া কাটেন ভাইস প্রিন্সিপাল। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছাত্রের বাসে ভাড়া কাটেন ভাইস প্রিন্সিপাল। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বিআরটিসি দোতলা বাসের চালক ৩৫ বছর বয়সি বাসির আহমেদ। আর কাকতালীয়ভাবে সেই বাসের কিছু সময়ের জন্য কন্ডাক্টর ছিলেন তারই শিক্ষক।

শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে ময়মনসিংহগামী বিআরটিসি দোতলা বাসে এমন এক বিরল ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য, ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য নান্দাইল চেয়রাস্থা বিআরটিসি টিকিট কাউন্টারে ৬০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে বাসে ওঠার পর দেখা যায়, মাথায় টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত একজন হুজুর যাত্রীদের টিকিট চেকসহ যারা টিকিট করেননি তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত ভাড়া আদায় করছেন।

খুবই তৎপরতার সঙ্গে একবার বাসের দোতলায়, আরেকবার নিচে তলায় ভাড়া আদায়ে ব্যস্ত ছিলেন। কোন গন্তব্যে কত ভাড়া, তা না জানলেও যাত্রীদেরকে বলছেন, ‘আন্দাজ করে দেন, আমার জানা নেই।’ এতে অনেক যাত্রীর মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হলেও কেউ ওই কন্ডাকটরের কাছে জানতে চাননি আসলে তিনি কে।

এমন সময় এই সড়কের কয়েকজন নিয়মিত যাত্রী ভাড়া আদায়কারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি যা বলেন, তা হলো—বাসের চালক বাসির হলেন তিনি যে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন সেই মাদ্রাসার ছাত্র। গত শনিবার তিনি ময়মনসিংহ যাওয়ার উদ্দেশে ওই বাসের টিকিট কাটতে গেলে ছাত্র বাসির চিনতে পেরে তাকে (শিক্ষক) সালাম করেন এবং সেই সঙ্গে টিকিট না কেটে বাসে বসতে বলেন।

পরে তার কাছে এসে বাসির অনুরোধ করেন, এই বাসটি কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্ধ। বন্ধ থাকায় বাসটির কিছু কাজ করার জন্য ময়মনসিংহে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তার সঙ্গে কোনো হেলপার বা ভাড়া আদায়কারী নেই। এই অবস্থা অনেক বেকায়দায় ফেলেছিল। কাউকে যে বলবেন, এই বিশ্বাসযোগ্য মানুষও পাচ্ছেন না। এতে তিনি (শিক্ষক) কিয়কর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি চালক বাসিরকে আশ্বস্ত করে নির্দিধায় বাস চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। পরে বাসযাত্রায় পুরো সময় দাঁড়িয়ে থেকেই হেলপার ছাড়াও ভাড়া আদায়ের দুইটি কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করেন।

ওই সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখেছেন, শিক্ষক ছাত্রকে সহযোগিতা করতে যা করা লাগে তা সম্পূর্ণভাবে পালন করেছেন। এক ফাঁকে জানতে চাইলে ওই শিক্ষক নিজের নাম সাইদুল ইসলাম বলে জানান। তিনি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাওলেরচর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি প্রায় গত ১০ বছর নিজের এলাকার একটি মাদ্রাসার সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বছর চারেক আগে নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগ দিয়েছেন। সেখানেই তিনি কর্মরত রয়েছেন।

ছুটিতে বাড়ি আসায় বিশেষ কাজে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে ওই বাস চালক ছাত্রের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি ছাত্রকে চিনতে না পারলেও ছাত্র ঠিকই চিনে ফেলেন। ভাড়া আদায় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটি আমি মহৎ একটা কাজ করেছি বলে মনে করি। এতে ছাত্রের নির্দেশনা ছিল না। তার অসহায়ত্বকে সহায়তা করেছি।’

এ বিষয়ে বাস চালক বাসির বলেন, ‘তিনি আমার ওস্তাদ। বাসস্ট্যান্ডে যখন আমি বাস নিয়ে বেকায়দায় পড়েছিলাম, তখন মনে হয়েছে, উনি শুধু আমার শিক্ষক নন, উনি তো আমার পিতার মতো। তাই হুজুরের সঙ্গে আমার অসহায়ত্বের বিষয়টি শেয়ার করলে তিনি আমাকে সহযোগিতা করতে রাজি হন। এটি আমার জন্য বড় পাওয়া। এটি অনুকরণীয়। আমি যখন বাস চালাচ্ছিলাম, তখন আনন্দে বুকটা ভরে গিয়েছিল।’

Link copied!