ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

সীতাকুণ্ডে নেই আর্সেনিক পরীক্ষা, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে হাজারো পরিবার

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৩:৪৯ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে না টিউবওয়েলের আর্সেনিক পরীক্ষা। এতে করে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে হাজারো পরিবার। জানা গেছে, সীতাকুণ্ডে ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা তুলনামূলক বেশি। ফলে এলাকায় নিরাপদ পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

এ উপজেলাটি আর্সেনিকপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। অধিকাংশ টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া যায়। পৌরসদরের অনেক টিউবওয়েলের পানিও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষত নিম্নাঞ্চলগুলোতে আর্সেনিকের মাত্রা বেশি। ফলে এলাকার মানুষ ডিপটিউবওয়েল, মিনারেল ওয়াটার কিংবা ফিল্টারের মাধ্যমে পানি পরিশোধন করে পান করছেন। এতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কিছুটা কমলেও সামগ্রিক ঝুঁকি রয়ে গেছে।

অগভীর নলকূপ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের অভাব এবং পর্যাপ্ত গভীর নলকূপ না থাকায় আর্সেনিকবাহী রোগ এলাকায় সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। আর্সেনিক ছাড়াও পানিতে অতিরিক্ত আয়রন ও লবণ পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়ায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, আর্সেনিকমুক্ত পানি পেতে তারা অর্থ ব্যয়ে ততটা আগ্রহী নন, ফলে অনেকে এখনো ঝুঁকিপূর্ণ পানি ব্যবহার করছেন।

বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের এক বাসিন্দা বলেন, ‘গত ৭–৮ বছর ধরে কাউকে টিউবওয়েলের আর্সেনিক পরীক্ষা করতে দেখিনি। এতে আমরা সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছি। গভীর নলকূপ বসাতে অনেক টাকা লাগে আমাদের সেই সামর্থ্য নেই। যদি সরকারিভাবে একটি গভীর নলকূপ দেওয়া হতো, আমরা খুব উপকৃত হতাম।’

অন্যদিকে উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বারআউলিয়া ও শীতলপুর এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত আদিবাসী পল্লিগুলোতে অন্তত ৬৫টি পরিবার বাস করছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে তারা পাহাড়ি ছড়া ও ডোবার পানি পান ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করছেন। ফলে এসব এলাকায় প্রায় সারা বছরই পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে থাকে। আদিবাসী শিশু ও বৃদ্ধরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজরদারি নেই।

ত্রিপুরাপাড়ার এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা প্রায় ৫৪ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। গত ৯-১০ বছর টিউবওয়েলে আর্সেনিক শনাক্তকরণের লাল চিহ্ন চোখে পড়েনি। কয়েক বছর আগে বহু শিশু পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। আমাদের দাবি, সরকার যেন আর্সেনিকমুক্ত ডিপ টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করে।’

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী প্রবণবেশ মহাজন বলেন, ‘আমি দায়িত্বে আসার পর গত এক বছরে কোনো আর্সেনিক পরীক্ষা হয়নি। কারণ সরকারি কোনো প্রকল্প না থাকায় মাঠপর্যায়ে কাজ করা যাচ্ছে না। উপজেলায় প্রায় সর্বত্রই কমবেশি আর্সেনিক আছে, অনেক টিউবওয়েলই অকার্যকর। তাই গভীর নলকূপের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে চলতি বছরে সরকারি উদ্যোগে ২০টি ডিপ টিউবওয়েল বসানো হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, ‘আর্সেনিক পরীক্ষার কিট সংকটের কারণেও পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কেউ পানি নিয়ে এলে ল্যাবে পরীক্ষা করে দেওয়া যায়।’

সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ সময় আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে শরীরে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তাই সচেতনতা জরুরি। আর্সেনিকযুক্ত নলকূপের পানি পান ও রান্নায় ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে উপজেলায় আরও গভীর নলকূপ স্থাপন প্রয়োজন।’

তিনি জানান, ‘তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর ‘আর্সেনিকসিস’ রোগী পাওয়া যায়নি।’