যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালকে ঘিরে নারী চোরচক্র সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা আস্তানা গেঁড়েছে সদর উপজেলার রুপদিয়া এলাকায়। গত ২৬ দিনে হাসপাতাল থেকে পুলিশ-জনতার হাতে ১০ সদস্য আটক হওয়ার পর এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে।
তাদের অধিকাংশ সদস্যের বসবাস রুপদিয়ায়। পাবনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে রুপদিয়ায় এসে ভাড়াবাড়িতে থাকেন। তারা রোগী সেজে জেনারেল হাসপাতালে এসে রোগীদের মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ও সোনার গহনা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের কবলে পড়ে সহজ-সরল রোগীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। ধরা পড়া নারী চোর সদস্যদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সিন্ডিকেট সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যেত।
জানা গেছে, বুধবার (১২ নভেম্বর) যশোর সদর উপজেলার মাহিদিয়া গ্রামের মোহাম্মদ হোসেন আলীর স্ত্রী তমা খাতুন জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে আসেন। বেলা পৌনে ১১টার দিকে তিনি করোনারি কেয়ার ইউনিটের নিচতলায় ৬ নম্বর কক্ষে ডাক্তার দেখাবেন বলে লাইনে ছিলেন।
এ সময় রোগী সেজে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বন্যা খাতুন ও তানিয়া খাতুন তার (তমা খাতুন) কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা চুরি করে। এ সময় অন্য রোগীর লোকজন তাদের হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন। বন্যা পাবনার আমিন বাজার থানার কাশীনাথপুর গ্রামের আল আমিনের স্ত্রী ও তানিয়া একই গ্রামের রায়হান হোসেনের স্ত্রী। তারা দুজনই যশোর সদর উপজেলার রুপদিয়া তেল পাম্প এলাকার বসবাস করতেন।
গত ৯ নভেম্বর লেবুতলা ইউনিয়নের দলেন নগর গ্রামের মহিদুল ইসলামের স্ত্রী আছিয়া খাতুন জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখানোর জন্য ৬ নম্বর কক্ষের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় রোগী সেজে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সদর উপজেলার রুপদিয়া তেল পাম্প এলাকার মহিদুল ইসলামের স্ত্রী ঝর্না খাতুন ও মন্টু মিয়ার স্ত্রী জুলেখা খাতুন তার (আছিয়া) গলা থেকে সোনার চেইন ছিঁড়ে নেয়। ঝর্না ঘটনাটি উপস্থিত রোগীদের জানালে তারা ওই দুই নারীকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন। তারাও পাবনা থেকে এসে রুপদিয়ায় থাকেন।
গত ২ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে নারী চোর চক্রের সদস্য জান্নাত খাতুনকে পুলিশ তাকে আটক করে। তিনি বগুড়ার গাবতলি উপজেলার বাগবাড়ি গ্রামের হাসান মোল্যার স্ত্রী। তিনি যশোর সদর উপজেলার রুপদিয়ার চাউলিয়া গেট এলাকায় বসবাস করতেন। জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কাছ থেকে কৌশলে মোবাইল, টাকা ও সোনার গহনা লুফে নেয়া তার কাজ। পুলিশ তাকে আটক তার ব্যাগ থেকে নগদ ২ হাজার ১০৪ টাকা ও তিনটি ব্যাগ উদ্ধার হয়। জান্নাত আরও একবার পুলিশের হাতে আটক হয়েছিল।
গত ১৮ অক্টোবর বাঘারপাড়া উপজেলার পাঠান পাইকপাড়া গ্রামের ইউসুফ আলীর স্ত্রী ফিরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৬ নম্বর কক্ষে ডাক্তার দেখাতে আসেন। এ সময় তার ব্যাগ থেকে ১৮০০ টাকা হাতিয়ে নেন সাথী ও রিতা বেগম। এ সময় দায়িত্বরত চিকিৎসক প্যারিস তাদের দুইজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন। সাথী সদর উপজেলার চুড়ামনকাটির ছাতিয়ানতলা গ্রামের মৃত মিরাজ মোল্যার স্ত্রী সাথী বেগম ও খুলনার পাইকগাছার দক্ষিণ বড়ডাল গ্রামের মৃত বারেক সর্দারের স্ত্রী রিতা খাতুন।
এর আগে হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে চক্রের দুই নারী সদস্যকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তারা হলেন, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকার মৃত মকবুল শেখের মেয়ে শিউলী খাতুন (৪০) ও হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ছাতেন গ্রামের সালাউদ্দিনের স্ত্রী শেফালী (৩৫)।
সূত্র জানায়, নারী চোর চক্রের সদস্যরা রোগী সেজে স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে হাসপাতালে আসে। তারা গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল রোগীদের টার্গেট করে মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ও সোনার গহনা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ২৬ চক্রের ১০ সদস্য আটক হয়েছে। ভিড়ের মধ্যে রোগী সেজে দাঁড়িয়ে থেকে তারা সাধারণ রোগীদের সর্বনাশ করেন। হাসপাতালকে ঘিরে এই নারী চোর সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। চক্রের অধিকাংশ সদস্যের বাড়ি পাবনায়। তারা যশোর সদরের রুপদিয়ায় আস্তানা গেড়ে অপরাধ করে চলেছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় কিছু নারী।
হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য সোহেল রানা জানান, জেনারেল হাসপাতালকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে একটি নারী চোর চক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা রোগীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে ধান্দাবাজিতে লিপ্ত হয়। সহজ-সরল নারীদের টার্গেট করে গহনা, মোবাইল ফোন এবং পার্সে থাকা নগদ টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রটির প্রধান কৌশল। গত কয়েকদিনে চক্রের ১০ সদস্যক আটক হয়। চুরি রোধে বর্হিবিভাগে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন জানান, জেনারেল হাসপাতালে ধরা পড়া নারী চোর চক্রের সদস্যরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চুরি কাজের সঙ্গে থাকার সত্যতা স্বীকার করেন। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলার পর আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। চক্রের অন্য সদস্যদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে।




সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন