ঢাকা সোমবার, ০৩ নভেম্বর, ২০২৫

আগামী দুদিনের মধ্যেই প্রশাসক বসছে পাঁচ ব্যাংকে

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৫, ০৬:৫৭ পিএম
প্রশাসক বসছে পাঁচ ব্যাংকে

আগামী দুদিনের মধ্যেই একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকে প্রশাসক বসছে বলে নিশ্চিত করেছে কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র। এর আগে গত মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের জন্য প্রশাসকদের নাম ঘোষণা করে। এদিকে প্রশাসক বসার এই খবরে নতুন করে অস্থিরতা শুরু হয়েছে আমানতকারীদের মধ্যে। তারা মনে করেন, আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে কার্যকর রোডম্যাপ প্রণয়নের আগেই ব্যাংকগুলোতে প্রশাসক বসলে টাকা ওঠাতে একসাথে হুমড়ি খেয়ে পড়বে আতংকিত আমানতকারীবৃন্দ। ফলে ব্যাংকগুলোর অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়বে।

সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর শাখায় আসা বিভিন্ন গ্রাহকের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে তারা নিজেদের জমাকৃত টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে যতটা আগ্রহী, একীভূতকরণের বিষয়ে ততটা আগ্রহী নন। তাদের মতে যেহেতু গ্রাহকবৃন্দ একটি নির্দিষ্ট ব্যাংকের উপর, আরও নির্দিষ্ট করে বললে একজন ব্যাংক কর্মকর্তার উপর বিশ^াস করে ওই ব্যাংকে তার আমানত জমা রেখেছেন, তাই তার কাছে ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা বা ওই শাখাই আশা-ভরসার শেষ স্থান। তার কাছে প্রশাসক বা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে না। নিজের আমানত ফেরত পেতে মরিয়া এ রকম একজন গ্রাহককে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনার কথা বলা হলে তিনি সখেদে জানান ‘আমি কি বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা রেখেছিলাম?’

অর্থনীতিবিদ ও বিজ্ঞজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে মার্জিংয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত দুর্বল ব্যাংক-কে উত্তরণের জন্য সবল ব্যাংকের সাথে মার্জ করা হয়, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচটি ব্যাংক-কে দুর্বল ঘোষণা করে একীভূত করতে চাচ্ছে যার উদাহরণ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাষায় ‘পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক’কে একীভূত করে একটি ব্যাংক গঠন করলে সে ব্যাংক (যার সম্ভাব্য নাম সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক) এই ব্যাংকগুলোর যাবতীয় মন্দঋণ ও দায় গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। অন্যদিকে একীভূতকরণের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে তলানীতে চলে আসা আমানতের কারণে তারল্য সুবিধাও পাবে না। এরকম অবস্থায় নতুন ব্যাংকটি এ দেশের অর্থনীতিতে অ্যাসেট না হয়ে লায়বিলিটিজ হবে বলেই আশংকা করা হচ্ছে।

ব্যাংক খাত সংস্কারে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও প্রশ্নবিদ্ধ পদ্ধতিতে দুর্বল ব্যাংক ঘোষণা করা এবং সংস্কার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সাধারণ আমানতকারীগণ একীভূতকরণের চেয়ে পূর্বের ব্যাংকেই আস্থা রাখতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। অধিকাংশ আমানতকারী মনে করেন, আগ বাড়িয়ে দুর্বল ঘোষণা করার ফলেই এই ব্যাংকগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা দিনকে দিন কমে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত বছর ইউনিয়ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে উল্লেখ করে একীভূত করার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক নিজেদেরকে দুর্বল হিসেবে মানতে রাজী না হয়ে প্রথম থেকেই একীভূত হওয়ার বিপক্ষে অবস্থান জানিয়ে এসেছে।