ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

ইবিতে সাজিদ হত্যার বিচার দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাওয়ের ডাক

ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৬:২৬ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় হত্যার বিচার দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতারা।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে উপস্থিত ছিলেন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন, ইবি ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন, সাদা দলের আহ্বায়ক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান, জার্নালিজম বিভাগের সভাপতি ড. রশিদুজ্জামান, জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. রফিকুল ইসলাম, গ্রীন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. গফুর গাজী, খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট ড. জালাল উদ্দীনসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ, সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ, ছাত্রশিবির সেক্রেটারি ইউসুফ আলী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক এস এম সুইট, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত, তালাবায়ে আরাবিয়ার সেক্রেটারি শামীম, শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দিনসহ অনেকে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের মনের কষ্ট হয়তো আমরা প্রকাশ করতে পারছি না। আজ ১৪৫ দিন হয়ে গেলেও হত্যার কোনো বিচার হয়নি। আজ আমি–আপনি খুন হলে আমাদের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে—এর কোনো গ্যারান্টি আছে? আপনারা যদি বিচার করতে না পারেন, তাহলে আমরা বিচার চেয়েই যাবো এবং আপনাদের গদি নড়ে যাবে। আমরা আর কোনো কথা শুনতে চাই না, আমরা আমাদের ভাই হত্যার বিচার চাই।’

জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটি প্রমাণিত যে সাজিদ আব্দুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে। সাজিদ হত্যাকাণ্ডকে আপনারা কোন দৃষ্টিতে দেখছেন—সেটাই দেখার বিষয়। যদি গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন, তাহলে তদন্তকারী সংস্থাকে চাপ দিচ্ছেন না কেন? সাজিদের বাবা–মা–বোনকে সান্ত্বনার বাণী শোনাতে পারছেন না কেন? যেদিন সাজিদের খুনিদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে দেখবো, সেদিন আমরা শান্ত হবো।’

ইবি ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পরও এ ধরনের ঘটনা ঘটবে এবং তার বিরুদ্ধে আমাদের শিক্ষকদের মাঠে নামতে হবে—এটা ভাবিনি। সাজিদ আব্দুল্লাহ নিজেও জুলাই যোদ্ধা; আমরাও তাই। এমন ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমরা চুপ থাকতে পারি না। ফ্যাসিস্ট আমলেও দিনে-দুপুরে খুন হতে পারে নাই—আমরা সবসময় সোচ্চার ছিলাম। আমাদের একটাই দাবি—অনতিবিলম্বে সাজিদের হত্যাকারীর বিচার করতে হবে।’

সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান বলেন, ‘অতীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেমন শরিক ছিলাম, আজও আছি। ১৪৫ দিন আগে হত্যাকাণ্ড হলেও এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। হয় ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করা হচ্ছে, অথবা প্রশাসন ব্যর্থ। যদি ব্যর্থ হয়, দায়ভার স্বীকার করতে হবে। যারা চিহ্নিত হয়েছে, তাদের নাম প্রকাশে গড়িমসি করলে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে আমরা থাকবো। প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে এদের শনাক্ত করতে বেশি সময় লাগে না। আমার মনে হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে বিচার বিলম্বিত করা হচ্ছে।’

জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র মাটিতে সাজিদ আব্দুল্লাহর মতো একজন কোরআনের হাফেজকে হত্যা করা হয়েছে। দায়িত্বে থাকাকালে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির রিপোর্ট জমা দিয়েছি। আমাদের আশা ছিল দ্রুত বিচার হবে। একজন খুনিকে ধরতে ৬ মাস সময় লাগা অস্বাভাবিক। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভাবছে আদৌ বিচার হবে কি না। হত্যাকারীদের ধরতে দেশের কোনো সংস্থার এতদিন লাগার কথা নয়। নিশ্চয়ই কেউ না কেউ স্বার্থে নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে। জুলাইয়ে যেমন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম, আজও বলছি—সাজিদ হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের সঙ্গে থাকবো।’

পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘অনেক আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, রাষ্ট্রের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার কথাও বলা হয়েছে। তাহলে আপনারা কী করছেন? সিআইডি আসে, ব্রিফিং দেয়, চলে যায় এভাবে আর কতদিন? ইতোমধ্যে ৫ মাস হয়ে গেছে। আর নয়। ১৭ ডিসেম্বর সাজিদ হত্যার ৫ মাস পূর্ণ হবে। ওই তারিখের মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে সেদিন উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। যদি গ্রেপ্তার করা হয়, ভালো; না হলে সেদিন আমরা কর্মসূচি সফলভাবে পালন করবো।’