সৌরজগতের বাইরে থেকে ধেয়ে আসছে এক রহস্যময় মহাজাগতিক বস্তু, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘৩আই/অ্যাটলাস’। এটি একটি সম্ভাব্য ইন্টারস্টেলার ধূমকেতু বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
তবে আশঙ্কার কিছু নেই—বস্তুটি পৃথিবী থেকে অন্তত ১.৬ জ্যোতির্বিজ্ঞান ইউনিট (প্রায় ১৫০ মিলিয়ন মাইল) দূরে থাকবে।
চিলির রিও হার্টাডো শহরে স্থাপিত অ্যাটলাস টেলিস্কোপের মাধ্যমে ধূমকেতুটিকে প্রথম শনাক্ত করা হয়। প্রথম পর্যবেক্ষণ আসে ১৪ জুন এবং নাসা আনুষ্ঠানিকভাবে এটি প্রকাশ করে ২ জুলাই। এরপর থেকেই বস্তুটির কক্ষপথ, গতি ও উৎস নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত জ্যোতির্বিদেরা।
বস্তুটি বর্তমানে সূর্য থেকে ৪১৬ মিলিয়ন মাইল দূরে এবং ধনু নক্ষত্রপুঞ্জের দিক থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৬০ কিলোমিটার গতিতে ছুটে আসছে। এর কক্ষপথ অত্যন্ত বাঁকা ও খোলা প্রকৃতির (হাইপারবোলিক), যা ইঙ্গিত করে এটি সম্ভবত সৌরজগতের বাইরের একটি আগন্তুক।
এরই মধ্যে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে সি/২০২৫ এন১ (অ্যাটলাস)। এর চারপাশে রয়েছে ধোঁয়াটে আবরণ এবং একটি ছোট লেজ, যা ধূমকেতুর বৈশিষ্ট্য বহন করে।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, বস্তুটির আকার প্রায় ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে, যা সেই মহাকাশীয় শিলাটির চেয়েও বড়, যেটি ডাইনোসরদের বিলুপ্তির কারণ হয়েছিল।
তবে এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। নাসা নিশ্চিত করেছে, বস্তুটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয়। এটি পৃথিবীর কাছাকাছি আসলেও নিরাপদ দূরত্বে থাকবে।
যুক্তরাজ্যের রয়্যাল অবজারভেটরি গ্রিনউইচের জ্যোতির্বিদ জেক ফস্টার জানিয়েছেন, বর্তমানে এটি খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়। তবে ২০২৫ সালের শেষ দিকে বা ২০২৬ সালের শুরুতে মাঝারি মানের টেলিস্কোপ দিয়েই এটি দেখা যাবে।
অক্টোবরের ৩০ তারিখ নাগাদ ধূমকেতুটি সূর্যের সবচেয়ে কাছে পৌঁছাবে এবং মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথের ভেতর দিয়ে চলে গিয়ে পুনরায় মহাশূন্যে হারিয়ে যাবে।
এডিনবরার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কলিন স্নডগ্রাসের মতে, ধূমকেতুটি বড় মনে হলেও এর চারপাশের ধূলিকণা ও গ্যাসের কারণে আলোর প্রতিফলন বেশি হতে পারে। ফলে আসল বস্তুটি হয়তো তুলনামূলকভাবে ছোট।
ব্রিটেনের সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ ড. মার্ক নরিস বলেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়, এটি হবে আমাদের সৌরজগতের তৃতীয় শনাক্ত ইন্টারস্টেলার বস্তু। এর মানে গ্যালাক্সিতে এমন ভ্রমণকারী বস্তু হয়তো আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি।’
তথ্যসূত্র: নাসা, বিবিসি, রয়াল অবজারভেটরি গ্রিনউইচ
আপনার মতামত লিখুন :