ঢাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার পানিশাইল গ্রামের কিশোর রাইহান কবির (১৭)।
বাবা রিকশাচালক, সেই পরিবারের একমাত্র ছেলে রাইহান। তিনিই ছিলেন দুঃখী মা-বাবার স্বপ্ন পূরণের আশ্রয়স্থল। বাবা-মা কাঁদতে কাঁদতে ছেলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নকে ভেবে এখন কেবলই বুক ভাসান।
রাইহান পানিশাইল বরেন্দ্র আলীয়া মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী ছিল। এ বছর দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল তার।
জানা যায়, পড়ালেখার পাশাপাশি অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করে সামান্য আয় করত, যা দিয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাত।
এদিকে দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে গত বছরের মে মাসে ঢাকায় যান রাইহান।
ঢাকার গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় থেকে সে কম্পিউটারভিত্তিক কাজ করত।
গত বছরের ২০ জুলাই শনিবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল সময়ে রাইহান রাস্তায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি দেখছিল।
এ সময় হঠাৎ পুলিশের ছোড়া গুলি তার মাথায় বিদ্ধ হয়।
প্রথমে গুলিবিদ্ধ রাইহানকে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
জানা যায়, ঘটনার পরে অচেনা এক ব্যক্তি রাইহানের মোবাইল থেকে তার বাবাকে ফোন করে দুঃসংবাদটি দেন।
কিছুক্ষণ পর আবার ফোন, আপনার ছেলে রাইহান আর নেই। এমন খবর শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন রাইয়ানের বাবা-মা।
ভাঙা মন নিয়ে কান্না বিজড়িত কণ্ঠে রাইহানের বাবা-মা বলেন, ‘তারা ঢাকায় থাকতেন, বাবার রিকশা চালানোর আয়েই চলত সংসার। পরবর্তীতে গ্রামের খাসজমিতে একটি ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন। সেই বাড়ি থেকেই দেখা যায় রাইহানের কবর। দিন-রাত সেই কবরের দিকে তাকিয়ে কাঁদেন তার বাবা-মা।
রাইহানের লাশ ২১ জুলাই সকালে গ্রামের এক আত্মীয়ের সহায়তায় বাড়িতে পৌঁছায়। সেদিনই পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। পুরো গ্রামবাসী চোখের জলে তাকে শেষ বিদায় জানায়।
নিহত রাইহানের পরিবার জানায়, এখন পর্যন্ত ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ থেকে ৫ লাখ টাকা, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা ও স্থানীয় বিএনপির পক্ষ থেকে ১৬ হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছেন তারা।
রাইহানের বাবা মামুন সরদার বলেন, ‘আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। আমি শুধু আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই। চাই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সম্মান।’
আপনার মতামত লিখুন :