জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ এক দিন আজ। সাত দফা দাবিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথমবারের মতো জাতীয় সমাবেশ করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীদের রাজধানীতে আনতে চার জোড়া বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছে দলটি। আর এ নিয়েই শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
সমাবেশে যোগ দিতে ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম থেকে জামায়াতের ভাড়াকৃত বিশেষ ট্রেনগুলো ঢাকায় আসে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এসব ট্রেন ভাড়া করতে জামায়াত অগ্রিম প্রায় ৩২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। পাশাপাশি ১০ হাজারেরও বেশি বাস বুকিং দেওয়া হয়েছে সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য।
কেন শুরু হলো বিতর্ক?
গত সোমবার জামায়াতের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে চার জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানোর অনুমতি দেয়। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে।
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন- একটি নিষিদ্ধ বা বিতর্কিত রাজনৈতিক দলকে কেন রেলওয়ে এত সুবিধা দিল?
সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের ফেসবুকে ব্যঙ্গ করে লেখেন, ‘আপনারা যারা বিয়েশাদি বা কোনো অনুষ্ঠানে ফ্লেক্স করতে পছন্দ করেন, তাদের জন্যে একটা আইডিয়া দেই। আগামীতে এ ধরনের কোনো আয়োজন করলে একটা সম্পূর্ণ ট্রেন ভাড়া করতে পারেন, ভাড়াও বেশ কম।’
সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ প্রশ্ন তোলেন, ‘জামায়াতকে যদি ট্রেন ভাড়া দেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বিএনপি বা অন্যান্য রাজনৈতিক দলকেও কি একই সুবিধা দেওয়া হবে? আর যাত্রীসাধারণের দুর্ভোগের কথা কি রেল কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করছে?’
কী বলছে বাংলাদেশ রেলওয়ে?
এদিকে এ বিতর্কের জেরে শুক্রবার (১৮ জুলাই) বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি লিখিত বিবৃতি দেয়। সেখানে জানানো হয়, ‘জামায়াত চার জোড়া ট্রেন ভাড়া করার জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছিল নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়া বাবদ ৩২ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েছে দলটি। অতীতেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে সমাবেশ বা জনসভা উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন দেওয়া হয়েছে।’
রেলওয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বিশেষ ট্রেন পরিচালনার অনুমতি না দিলে সাধারণ ট্রেনে টিকিটবিহীন ভিড় বেড়ে যায়, এতে যাত্রী ভোগান্তি বাড়ে এবং রাজস্ব হারায় রেলওয়ে। বিশেষ ট্রেনে দলীয় যাত্রীরা ভ্রমণ করলে সাধারণ যাত্রীদের স্বস্তি মেলে, এবং রেলওয়ে নির্দিষ্ট রাজস্বও পায়।’
জামায়াত কী বলছে?
জামায়াতের রাজশাহী মহানগর সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘আমরা বৃহস্পতিবার ট্রেনের ১,১৭৯টি টিকিটের মূল্য হিসেবে প্রায় ১২ লাখ ৭ হাজার টাকা পরিশোধ করে রশিদ নিয়েছি। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলা থেকে ৮ থেকে ১০টি বাস ভাড়া করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে নেতাকর্মীদের।’
তবে ট্রেন ভাড়া নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অতীতেও কি এমন নজির আছে?
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রাজশাহী ও যশোরে দলীয় সমাবেশে অংশ নিতে আওয়ামী লীগ রেলওয়ের কাছ থেকে ৮টি বিশেষ ট্রেন ভাড়া নেয়। ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই রাজশাহীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় অংশ নিতে এসব ট্রেনে প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।
জামায়াতের ট্রেন ভাড়া বিতর্কে পক্ষ-বিপক্ষ মত থাকলেও বাংলাদেশ রেলওয়ে বলছে, এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া- যেখানে নির্ধারিত নিয়ম ও ভাড়ার বিনিময়ে যে কোনো প্রতিষ্ঠান বা দল ট্রেন ভাড়া নিতে পারে। তবে রাজনৈতিক বাস্তবতায় এমন সিদ্ধান্তে জনমত বিভক্ত থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়।
আপনার মতামত লিখুন :