ঢাকা রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫

শিশু হাসপাতালে বিতর্কিত ৬৫ চিকিৎসকের নিয়োগ বাতিল

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২৫, ০৫:১৫ পিএম
শিশু হাসপাতাল। ছবি- সংগৃহীত

সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত ৬৫ জন চিকিৎসকের নিয়োগ বাতিল করেছে  বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট। নতুন করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সব প্রক্রিয়া নিয়ে ৪২ জনকে স্থায়ীভাবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

রোববার (২০ জুলাই) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলম।

তিনি জানান, নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তাই পরিচালনা বোর্ডের সভায় আলোচনা শেষে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে নিয়োগ বাতিলের। এখন নিয়ম অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নতুনভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে।

এর আগে, গত ৪ জুলাই কোনো লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষা ছাড়াই অভ্যন্তরীণভাবে ৬৫ চিকিৎসক নিয়োগ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের অধিকাংশই একটি রাজনৈতিক মতাদর্শের হিসেবে পরিচিত হওয়ায় এ নিয়ে চিকিৎসক সমাজে চরম অসন্তোষ তৈরি হয়।

নিয়োগ সংক্রান্ত তদন্তে উঠে এসেছে, পুরো প্রক্রিয়াটিই ছিল অস্বচ্ছ ও পক্ষপাতদুষ্ট। পরিচালক ডা. মাহবুবুল হক ও নিয়োগ কমিটির প্রধান ডা. একেএম আজিজুল হক পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে গোপন বিজ্ঞপ্তির আশ্রয় নেন বলে অভিযোগ। নিয়োগের ক্ষেত্রে হাসপাতালের ওয়েবসাইট বা জাতীয় দৈনিকে কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। বরং অভ্যন্তরীণ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দ্রুত নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়।

বঞ্চিত চিকিৎসকরা অভিযোগ করেছেন, হাসপাতালে কর্মরত অনারারি চিকিৎসকদের একটি অংশকে রাতারাতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে—তাদের বেশিরভাগই কোনো প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় অংশ নেননি। লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন।

চিকিৎসকদের অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম নিয়োগ প্রক্রিয়া তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়ে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠিও পাঠানো হয়।

তদন্তে নিয়োগের ক্ষেত্রে একাধিক অনিয়ম ধরা পড়ে। জানা যায়, এর আগেও ২০২১ সালে একই প্রক্রিয়ায় ৬০ জন চিকিৎসককে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে পরে তাদের স্থায়ীত্ব দেওয়া হয়েছিল। এবারও একই কৌশল অনুসরণ করায় বঞ্চিত চিকিৎসকদের দাবি, এটি ‘জুলাই বিপ্লবের আদর্শের সঙ্গে প্রতারণা’।

নিয়োগবঞ্চিতরা বলছেন, যদিও শিশু হাসপাতাল একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, তবু এর মোট ব্যয়ের এক-তৃতীয়াংশ বহন করে সরকার। কাজেই নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও নিয়ম মানার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা। কিন্তু সেটি লঙ্ঘন করা হয়েছে প্রতিটি ধাপে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তা জানার জন্য আমরা চিঠি দিয়েছি। জবাব পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিভিন্ন মহলের চাপ ও মন্ত্রণালয়ের তদন্তের পর প্রায় এক সপ্তাহের মাথায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এখন নিয়মিত প্রক্রিয়ায় নতুন নিয়োগের জন্য জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে এবং পরীক্ষা নিয়ে ৪২ জন চিকিৎসককে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে।

নিয়োগে অনিয়ম, গোপন প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগের জবাব হিসেবে এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের জন্য একটি নজির স্থাপন করল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।