ঢাকা রবিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৫

পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের জন্য আইনি সংস্কার চায় বাংলাদেশ ব্যাংক

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৫, ১১:৫২ এএম
ছবি- সংগৃহীত

পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের জন্য আইনি সংস্কারের প্রস্তাব করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিজেদের স্বায়ত্তশাসনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মুক্ত রাখতে এই সংস্কার চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ সংশোধনের খসড়া তুলে ধরা হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্বের মর্যাদা বৃদ্ধি, পরিচালনা পর্ষদের পুনর্গঠন এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও অপসারণ প্রক্রিয়ায় সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সংশোধনীর খসড়া উপস্থাপন করা হয় এবং নীতিগতভাবে তা অধ্যাদেশ আকারে জারির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে- অন্তর্বর্তী সরকারের সামগ্রিক সংস্কারের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ পাস হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে।

চিঠিতে গভর্নর লিখেছেন, এই সংশোধনীগুলোর মাধ্যমে আর্থিক খাতে অতীতের ভুল ও অনিয়মের পুনরাবৃত্তি রোধে একটি শক্তিশালী আইনি ভিত্তি গড়ে তোলা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, অতীতে সংস্কারের প্রচেষ্টা ‘রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সদিচ্ছার অভাবে’ ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান সময়টিই ‘সবচেয়ে উপযুক্ত’ এবং এটি সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হিসেবে বিবেচিত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়োগ ও অপসারণ প্রক্রিয়া: চিঠিতে গভর্নর প্রস্তাব করেন, সাবেক অর্থ বা পরিকল্পনা মন্ত্রী বা উপদেষ্টা অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক বা বিদায়ী

গভর্নরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হোক, যাঁরা নির্ধারিত বিধি অনুযায়ী গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের নিয়োগ দেবেন। এ বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়- এই প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য হলো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা, যা ‘একটি আধুনিক ও স্বায়ত্তশাসিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌলিক শর্ত। উদাহরণ হিসেবে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ব্যাংক অব কানাডা, সাউথ আফ্রিকান রিজার্ভ ব্যাংক ও ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের নাম উল্লেখ করা হয়।

শীর্ষ কর্মকর্তাদের অপসারণের অভিযোগ যাচাই করতে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত আদালত গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে কেবল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তাঁদের অপসারণ নিশ্চিত হয়। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের উদাহরণ দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে- আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত যে, কোনো কর্মকর্তাকে অপসারণের জন্য আইনের আওতায় অসদাচরণ বা অক্ষমতার প্রমাণ করা প্রয়োজন।

পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন : চিঠিতে প্রস্তাব করা হয়েছে, সরকারনিযুক্ত পরিচালক সংখ্যা তিন থেকে একে নামিয়ে আনা হবে। আর স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞের সংখ্যা চার থেকে ছয় করা হবে, যাতে নিয়ন্ত্রণ ও নীতি নির্ধারণে স্বাধীনতা আরও শক্তিশালী হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের অনেক প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলত স্বাধীন পরিচালনা পর্ষদ দিয়ে পরিচালিত হয়। বর্তমানে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের বোর্ডে রয়েছেন ১২ জন সদস্য। এর মধ্যে গভর্নর, দুজন ডেপুটি গভর্নর ও ৯ জন নন-এক্সিকিউটিভ সদস্য। অন্যদিকে বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ডে আছেন আটজন সদস্য গভর্নর, একজন ডেপুটি গভর্নর, তিনজন সচিব, দুজন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাবসায়িক সংগঠনের একজন প্রতিনিধি।

গভর্নরের মর্যাদা : গভর্নরের পদমর্যাদা পূর্ণ মন্ত্রীর সমান করা হবে, যা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের মতো দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এতে করে নীতিনির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা বজায় থাকবে। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মর্যাদা, আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিত্ব ও অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত হবে।