ঢাকা সোমবার, ০৩ নভেম্বর, ২০২৫

সাপ্তাহিক ‘পঙক্তি’র দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৫, ০৭:৩২ পিএম
সাপ্তাহিক ‘পঙক্তি’র দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

সাহিত্য, সংস্কৃতি ও নারী অধিকারকে সামনে রেখে দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উদযাপন করল সাপ্তাহিক ‘পঙক্তি’। এই উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বক্তারা মুক্তচিন্তা, সাংস্কৃতিক জাগরণ ও সমানাধিকারের সমাজ গঠনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। 

রোববার (২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠান সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় পত্রিকার অগ্রযাত্রা ও ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানান তারা।

এসময় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ বলেন, ‘নারীরা সাংবাদিকতা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিক বৈষম্য ও হেনস্তার শিকার হন। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও নারী ও শিশুরা লাঞ্ছিত ও নিপীড়িত হচ্ছে। আমরা চাই একটি সত্যিকারের বৈষম্যমুক্ত সমাজ, যেখানে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত থাকবে।’

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সাপ্তাহিক ‘পঙক্তি’ আরও এগিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে।’

প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমানে আমরা সাংস্কৃতিকভাবে কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে আছি। বারবার রাজনৈতিক আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো সাংস্কৃতিক বিপ্লব।’

কবি ও কলামিস্ট সোহরাব হাসান বলেন, ‘ফেসবুক ও ইউটিউবের যুগে একটি সাহিত্য পত্রিকা টিকিয়ে রাখা কঠিন কাজ। বর্তমানে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে একটি বৈরী পরিবেশ তৈরি হয়েছে, মাজার, দরগা, শিল্পী ও সাংস্কৃতিক তৎপরতা সবই আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সুকুমার ভিত্তিকে রক্ষা করতে সম্মিলিতভাবে লড়াই করতে হবে। ষাটের দশকে যেমন রাজনৈতিক আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন একত্রিত হয়েছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার জন্য, এখন সময় এসেছে নতুন সাংস্কৃতিক জাগরণের।’

সাপ্তাহিক ‘পঙক্তি’র সম্পাদক কবি জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না বলেন, ‘আজ আমি আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত। আমি ২৬ বছর ধরে কাজ করছি, কারোর মুখাপেক্ষী হয়েছি না। অনেক কষ্টের পর আজ পত্রিকাটি এ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ‘পঙক্তি’ পত্রিকায় নারীদের যে কোনো সমস্যা সর্বাধিক প্রাধান্য পাবে। এটি আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’

বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘পত্রিকাটির নাম ‘পঙক্তি’—কারণ সম্পাদক একজন কবি। পঙক্তি শব্দের অর্থ হলো কবিতার লাইন বা সারি। এছাড়া এটি সম্পাদককন্যার নামও। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে এবং অত্যন্ত সফল। এটি আরও গতিশীল রাখতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’

শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক মানিক মুনতাসির বলেন, ‘মানুষ তার সীমা ছাড়িয়ে যায় তেমনি সাপ্তাহিক ‘পঙক্তি’ও তার সীমা ছাড়িয়ে আরও দূরে যাবে। আমরা আশা করি পত্রিকাটি পাঠককে অনুপ্রাণিত করবে।’

কবি ও সাংবাদিক বজলুর রহমান বলেন, ‘একটি পত্রিকা প্রকাশনার যন্ত্রণা আমরা জানি। বর্তমান কঠিন সময়ে ‘পঙক্তি’র বর্ষপূর্তি পালন সত্যিই প্রশংসনীয়। এটি মানসম্পন্ন ও অনন্য একটি পত্রিকা।’

কবি আব্দুল মান্নান বলেন, ‘পত্রিকাটি ঝকঝকে এবং আকর্ষণীয়। যে কেউ দেখলেই পড়তে ইচ্ছুক হবে। আমি পত্রিকাটির সাফল্য কামনা করছি।’

কবি মোশাররফ হোসেন ইউসূফ বলেন, ‘এত মানসম্পন্ন পত্রিকা এখন বাজারে খুব কম। একটি পত্রিকা বের করা এবং টিকিয়ে রাখা খুবই কঠিন কাজ, যা ‘পঙক্তি’ পরিবার অত্যন্ত সফলভাবে করছে।’

বাংলানিউজের সাংবাদিক তুলনা আফরিন বলেন, ‘একজন নারী সম্পাদক হয়ে একটি পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ করা সত্যিই গর্বের বিষয়। পুরো নারী জাতির জন্য এটি সম্মানের। আমি সাপ্তাহিক ‘পঙক্তি’কে ভবিষ্যতেও সফল ও প্রভাবশালী হোক সেই কামনা করি।’

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে জেরিন ফেরদৌস পঙ্ক্তি। বক্তারা পঙক্তি’র সম্পাদক ও প্রকাশক জান্নাতুল ফেরদৌস পান্নাকে অভিনন্দন জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন পঙক্তি’র ভবিষ্যতেও সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।