চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ২৩ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৩৪ জন। এ সময় ৬০ জনকে আটকও করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
বুধবার (১২ নভেম্বর) মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে। দেশের ১৫টি জাতীয় পত্রিকার সংবাদ ও সংগঠনের নিজস্ব তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও দেশে মানবাধিকার ও আইনের শাসনের কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি। ছাত্র–জনতার আন্দোলনের পর পরিবর্তন এলেও বাস্তবে মানুষ এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়েছে
প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ৭৫৬টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১১৭ জন নিহত ও ৬ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।
সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ ঘটেছে বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে। শুধু বিএনপির অন্তর্কোন্দলেই ৪৩২টি ঘটনায় ৭০ জন নিহত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দলে ১৩টি ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছেন। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে প্রাণ গেছে ১৯ জনের। এছাড়া বিএনপি–জামায়াত, বিএনপি–এনসিপি, আওয়ামী লীগ–এনসিপি ও অন্যান্য দলের মধ্যে সংঘর্ষেও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
নিহত ১১৭ জনের মধ্যে বিএনপির ৮০ জন, আওয়ামী লীগের ২৩ জন, জামায়াতের তিনজনসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য রয়েছেন।
সাংবাদিকদের ওপর হামলা
গত ১০ মাসে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, হয়রানি ও মামলার সংখ্যাও বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময়ে ২৭০টি ঘটনায় দুই সাংবাদিক নিহত ও ২৩৪ জন আহত হয়েছেন। অন্তত ১০৩ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ২৯টি মামলা হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা আইনে পাঁচটি মামলা হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
গণপিটুনিতে ১৪০ জনের মৃত্যু
এই সময়কালে অন্তত ২৫৬টি মব সহিংসতা ও গণপিটুনির ঘটনায় ১৪০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৩১ জন।
কারাগারে মারা গেছেন ৬৮ জন, এর মধ্যে ২২ জন দণ্ডপ্রাপ্ত ও ৪৬ জন হাজতি।
সংখ্যালঘু ও মাজারে হামলা
এইচআরএসএস জানায়, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ২৪টি হামলায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। ৫টি মন্দির ও ৩৭টি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
দেশজুড়ে ৫০টির বেশি মাজারে হামলা ও লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলা দরবারে হামলার ঘটনায় মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ভয়াবহ ঘটনাও ঘটেছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন
গত ১০ মাসে অন্তত ১,৭৩২ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৪১ জন, যাদের অর্ধেকের বেশি শিশু। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৪ জনকে, আত্মহত্যা করেছেন ৯ জন।
এ সময়ে ১,১৯৮ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪৩ জন মারা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ, হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতনে ২৯ জনের প্রাণহানির তথ্য দিয়েছে এইচআরএসএস। এছাড়া পুলিশের অভিযানে ৪৯ হাজারের বেশি রাজনৈতিক কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সদস্য।
শ্রমিক নির্যাতন
এ সময়ে শ্রমিক আন্দোলন ও সংঘর্ষে ২১১টি ঘটনায় ৮৫ জন নিহত ও ৯০০–এর বেশি আহত হয়েছেন।

