বিশেষ পরিস্থিতিতে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া এক ধরনের অস্থায়ী দলিলকে বলা হয় ট্রাভেল পাস। এটি সরকার, দূতাবাস বা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা ইস্যু করতে পারে। যদিও এটি পাসপোর্টের মতোই ভ্রমণদলিল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তবে এর বৈধতা ও ব্যবহারের নির্দিষ্ট সময় ও সীমা রয়েছে।
ট্রাভেল পাস সাধারণত যাদের পাসপোর্ট নেই বা মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, নাগরিকত্ব নেই এমন ব্যক্তি বা শরণার্থীদের দেওয়া হয়। ট্রাভেল পাস একক ভ্রমণের জন্য বৈধ একটি দলিল, তবে এর মেয়াদ পাসপোর্টের মতো দীর্ঘ নয়। সহজ কথায়, এটি হলো জরুরি অবস্থায় বা বিশেষ প্রয়োজনে নিজ দেশে ফেরা বা নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য একটি বিকল্প দলিল।
পাসপোর্টের সঙ্গে ট্রাভেল পাসের পার্থক্য কী?
পাসপোর্ট এবং ট্রাভেল পাস উভয়ই ভ্রমণের জন্য ব্যবহৃত দলিল। তবে এ দুটির উদ্দেশ্য, বৈধতা এবং ব্যবহারে মৌলিক পার্থক্য আছে।
পাসপোর্ট বৈধ নাগরিকত্বের প্রমাণ এবং দীর্ঘমেয়াদি আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য এটি দরকার হয়। অন্যদিকে ট্রাভেল পাস অস্থায়ী ভ্রমণ বা নিজ দেশে ফেরার (জরুরি বিকল্প) অনুমতি দেয়। এটি শুধু একটি দেশ বা জায়গায় যাওয়ার জন্য দেওয়া হয়, পরিস্থিতি বিবেচনায়।
পাসপোর্টের মেয়াদ ৫ থেকে ১০ বছর হয়। একক ভ্রমণের জন্য ট্রাভেল পাসের মেয়াদ হয় সাধারণত ৩ মাস থেকে ১ বছর। পাসপোর্ট শুধু নিজ দেশের সরকারই ইস্যু করতে পারে। অন্যদিকে, ট্রাভেল পাস সরকার, কনস্যুলেট বা ইউএনএইচসিআরের মতো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা ইস্যু করে।
পাসপোর্টে ভিসা এবং স্ট্যাম্পের জন্য পাতা থাকে। তবে ট্রাভেল পাস যেহেতু জরুরি বা সীমিত বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাই এতে কোনো ভিসা পেজ নেই।
কোন পরিস্থিতিতে ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হয়?
ট্রাভেল পাস সাধারণত তিনটি প্রধান পরিস্থিতিতে ইস্যু করা হয়। কারও যদি পাসপোর্ট না থাকে বা মেয়াদ শেষ হয়ে যায় কিংবা যাদের পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে, কিন্তু তাদের নিজ দেশে ফেরা দরকার—এ ধরনের কিছু জরুরি পরিস্থিতিতে ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হয়। এটি সাধারণত কনস্যুলেট বা ইমিগ্রেশন অফিস থেকে এক থেকে তিন দিনের মধ্যে ইস্যু করা হয়। এরপর ব্যক্তিকে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হয়।
অন্যদিকে, শরণার্থী বা রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের পাসপোর্ট না থাকলে জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) সাহায্যে তাদের জন্য কনভেনশন ট্রাভেল ডকুমেন্ট (সিটিডি) ইস্যু হয়। এটি আসলে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে স্বীকৃত একটি বিশেষ ট্রাভেল পাস।
এছাড়া, কিছু বিশেষ বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এ ধরনের ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হয়েছে নানাসময়ে। করোনা মহামারির সময় ভ্যাকসিন বা করোনা পরীক্ষাসংক্রান্ত তথ্য যাচাই করতে আইএটিএ ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হয়েছিল। আবার কিছু দেশে ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হয় দেশ ছাড়ার অনুমতি হিসেবে। যেমন—চীন ও রাশিয়ায়।
বাংলাদেশে ট্রাভেল পাস ইস্যুর উদাহরণ আছে কি?
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশি নাগরিক এবং পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দাদের জন্য 'ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ স্পেশাল পাসপোর্ট' ইস্যু করা হতো। বিশেষ এই পাসপোর্ট এক ধরনের ট্রাভেল পাস। এটি শুধু ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ভ্রমণের জন্য বৈধ ছিল। ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইসিএও) নিয়ম পরিবর্তন করলে পরের বছর থেকে এটি বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কনস্যুলেটগুলো যাদের পাসপোর্ট নেই বা হারিয়ে গেছে, কিন্তু বাংলাদেশে ফেরা দরকার—এমন ক্ষেত্রে ট্রাভেল পারমিট (টিপি) ইস্যু করে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, 'বাংলাদেশি নাগরিকের বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকলে, কিন্তু বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য ট্র্যাভেল পারমিট প্রদান করা হয়।'
এই ট্রাভেল পারমিট একটি একমুখী যাত্রার দলিল। এটি তিন মাসের জন্য বৈধ এবং এটি ব্যবহার করে শুধু বাংলাদেশে ফেরা যায়। এটি কোনোভাবেই পাসপোর্টের বিকল্প হিসেবে অন্য দেশে ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করা যায় না।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন