বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় ১৭ বছর ধরে লন্ডনে স্বেচ্ছানির্বাসনে রয়েছেন। সম্প্রতি দেশে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো থেকে খালাস পাওয়ায় তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে তার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ও গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
সরকারের আনুষ্ঠানিক অবস্থান
নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই, বিশেষ ব্যবস্থা দিতে প্রস্তুত: বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো আইনি বাধার পাশাপাশি নিরাপত্তা বিষয়ক কোনো ঝুঁকি নেই।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘বাংলাদেশে কারো কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি বা শঙ্কা নেই। সরকার সকলকে সুরক্ষিত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘যাদের বিশেষ নিরাপত্তার প্রয়োজন হবে, তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার আয়োজন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রস্তুত রয়েছে।’
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, তারেক রহমানের দেশে ফিরতে আইনগত কোনো বাধা নেই এবং সরকার তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন নিশ্চিত করেছেন যে, তারেক রহমান যদি দেশে ফেরার জন্য আবেদন করেন, তবে একদিনের মধ্যেই তার জন্য ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবও জানিয়েছেন, তারেক রহমানের ফেরার বিষয়ে সরকারের কোনো আপত্তি বা বিধিনিষেধ নেই।
বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্বেগের কারণ
সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বস্ত করা হলেও বিএনপির নেতারা তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন না থাকলে কেউই নিরাপদ নয়।
বিএনপির নেতারা বলছেন, দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত এককভাবে তারেক রহমানের নিয়ন্ত্রণে নয়, বরং এটি সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল।
দলটির নেতারা মনে করেন, তারেক রহমানের দেশে না ফেরার পেছনে নিরাপত্তাজনিত কারণ প্রধান।
তারেক রহমান ও তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যবহারের জন্য ব্যক্তিগত বুলেটপ্রুফ গাড়ি আমদানির অনুমতি থাকলেও, গাড়িগুলো এখনো দেশে এসে পৌঁছায়নি। এই বিলম্বকেও নিরাপত্তা শঙ্কার একটি কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক ও আইনি প্রেক্ষাপট
২০০৮ সাল থেকে তারেক রহমান সপরিবারে লন্ডনে বসবাস করছেন। বিগত সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৮৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। বিএনপি বরাবরই এই মামলাগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছিল।
২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, আদালত বিভিন্ন মামলায় তাকে বেকসুর খালাস দেওয়ায় তার দেশে ফেরার আইনি পথ সুগম হয়।
ফেরার সিদ্ধান্ত: নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর
বর্তমানে তারেক রহমানের মা বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির উপর তারেক রহমানের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নির্ভর করতে পারে।
সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, সরকারের পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে দেশে ফিরলে প্রয়োজনীয় এমনকি ‘বিশেষ’ নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে, তারেক রহমান ও তার দল বিএনপি এখনো নিরাপত্তা নিয়ে পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারেনি, যে কারণে তার দেশে ফেরা বিলম্বিত হচ্ছে। তার দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত মূলত তার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক




