বাংলাদেশের পর্যবেক্ষণ করা রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা, মিথ্যা মামলা-জুলুম এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কারাভোগের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি হৃদয়স্পর্শী পোস্ট দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাতে দেওয়া সেই পোস্টে মেয়ের জন্য কারাগার থেকে কেনা একটি ব্যাগ এবং মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের আবেগঘন স্মৃতিও বর্ণনা করেছেন তিনি। পোস্টটি রূপালী বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘আমার মেয়ে যখন আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল ঢাকা জেলে, এই ব্যাগটা আমি ওকে দিয়েছিলাম! ব্যাগটা জেলের ভেতরে এক বন্দি বানিয়েছিল! তার কাছ থেকে কিনেছিলাম! জানি না, কাউকে কল্পনায় রেখে সে বানিয়েছিল কি না এই ব্যাগটা! প্রশ্ন করা হয়নি ছেলেটাকে!’
‘গত পনেরো বছরে বাংলাদেশের জেলে লাখ লাখ কর্মী বন্দি ছিল, মিথ্যা মামলায়! আমি নিজে, আমার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের করা, ১১০-এর বেশি মামলার আসামি ছিলাম। ময়লার গাড়ি পোড়ানো থেকে শুরু করে হত্যা মামলা! সব মিথ্যা মামলা! আড়াই বছরের বেশি জেলে ছিলাম! কোর্টে কোর্টে আমার অসুস্থ স্ত্রী দৌড়ে গেছে! আসিফ নজরুল একবার পত্রিকায় লিখেছিলেন একটি কলাম ‘রাষ্ট্র বনাম মির্জা ফখরুল’! জেলে মাটিতেও শুতে হয়েছিল!’
‘নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিনিময়ে মুক্তির প্রলোভন দেখানো হয়েছিল, কিন্তু ‘প্রহসনের নির্বাচন’-এ তারা অংশ নেননি, যার ফলস্বরূপ তাকে ৭ বার জামিন প্রত্যাখ্যাত হতে হয়েছে।’
কারাগারে তার দলের সাধারণ কর্মীদের ওপর হওয়া অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে মির্জা ফখরুল গভীরভাবে ব্যথিত হয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি জেলে দেখেছি আমাদের ছেলেদের ওপর কী অত্যাচার হয়েছে! সারা শরীর জুড়ে অত্যাচারের দাগ! এদের অনেকের সারা জীবন, ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে গেছে জেলে! পড়াশোনা হয়নি, সংসার হয়নি! এদের পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে! যারা মাঠের রাজনীতি করে না, তারা কোনো দিন জানবে না এদের স্ট্রাগল! কথা নিয়ে অনেক রাজনীতি করা যায়, ফ্যাসিজমের সামনে দাঁড়িয়ে জেলে যেতে পারে না সবাই!’
দীর্ঘ কষ্টের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল জানান, ‘তিনি কোনো ধরনের প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন বরং তিনি দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান।’
তিনি লিখেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের করা প্রতিটি মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে! হাসিনার এবং তার মাফিয়া বাহিনীর প্রতিটি অপরাধের বিচার করতে হবে! আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাসী নই! আমরা প্রকৃত অন্যায়কারীর বিরুদ্ধেই মামলা করব এবং শাস্তি নিশ্চিত করব। যে যেই অন্যায় করেনি, তাকে সেই অন্যায়ের জন্য হয়রানি কেন করা হবে? কোনো নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করার নাম রাজনীতি নয়। আমরা ইনসাফের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে!’

