ঢাকা শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫

কোরআনের যে ৪ ঘটনা ঈমান বৃদ্ধি করবে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২৫, ১০:১১ এএম
ছবি- সংগৃহীত

মানুষ আজ নানা মানসিক চাপ, অনিশ্চয়তা ও হতাশার মধ্যে জীবন কাটায়। দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী দুঃশ্চিন্তা আমাদের এমনভাবে পীড়া দেয় যে আমরা আল্লাহ তায়ালার প্রতিশ্রুতি ও পুরস্কারের কথা ভুলে যাই। অথচ পূর্ববর্তী প্রজন্মের মানুষ প্রতিকূল মুহূর্তে কীভাবে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ধৈর্যের সঙ্গে বিপদ মোকাবিলা করেছেন, কোরআনের ঘটনাগুলো তারই জীবন্ত শিক্ষা।

আল্লাহ তায়ালার ওপর দৃঢ় ভরসা মুমিনকে স্মরণ করিয়ে দেয় সমস্ত নিয়ন্ত্রণ শুধু তাঁর হাতে, তিনিই ভাগ্য নির্ধারণকারী। কষ্টের মুহূর্তে এই বিশ্বাসই মানুষকে সাহস ও শক্তি দেয় এগিয়ে চলার।

কোরআনে বর্ণিত অসংখ্য ঘটনা শুধু ইতিহাস নয়; এগুলো জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় আশা, শিক্ষা ও ঈমানের শক্তি যোগায়। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আমি মানুষকে কষ্টে সৃষ্টি করেছি।” (সুরা আল-বালাদ, আয়াত ৪)। পরীক্ষার মধ্য দিয়েই মানুষ পরিশুদ্ধ হয়, ধৈর্যের বিনিময়ে পায় বিশাল পুরস্কারের আশ্বাস।

ইউসুফ (আ.)-এর ধৈর্য ও পবিত্রতার শিক্ষা

বর্তমান যুগের তরুণরা নৈতিকতার বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। হজরত ইউসুফ (আ.)-এর ঘটনা শেখায় ধৈর্য, আত্মসংযম ও ঈমানের জোরে সব প্রলোভন জয় করা সম্ভব।

শৈশবে দাস হিসেবে বিক্রি হওয়া, অন্যায়ের অভিযোগে কারাবন্দি হওয়া কোনো অবস্থাতেই তিনি আল্লাহর আদেশ থেকে সরে যাননি। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাঁকে মিশরের শাসক বানিয়ে মর্যাদা দান করেন। এই ঘটনা প্রমাণ করে প্রতিটি পরীক্ষার পরই আছে পুরস্কার, যা দুনিয়ায় হোক বা আখিরাতে অবশ্যই নিশ্চিত।

মরিয়ম (আ.)-এর অলৌকিকতা বিশ্বাসের শক্তি

হজরত মরিয়ম (আ.) আল্লাহর অনন্য বান্দী, যিনি পবিত্রতা ও আনুগত্যের প্রতীক। তার মাধ্যমেই পিতা ছাড়াই হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম হয়েছে যা আল্লাহর অসীম ক্ষমতার চূড়ান্ত নিদর্শন। এই ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয় আল্লাহ চাইলে অসম্ভবকেও সম্ভব করেন।

ইউনুস (আ.)-এর দোয়া তাওবার সেরা উদাহরণ

নিজ জাতির প্রতি অভিমানে চলে গিয়েছিলেন হজরত ইউনুস (আ.)। পরে সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হয়ে মাছের পেটে বন্দি অবস্থায় তিনি পড়েন। তখন তিনি আল্লাহকে ডাকেন “লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা, ইন্নি কুনতু মিনাজ্জালিমিন।” আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে মুক্তি দেন। এই ঘটনা শেখায় সত্যিকারের তাওবা ও আল্লাহর কাছে ফিরে আসলে কোনো মুমিনই ব্যর্থ হয় না।

আয়েশা (রা.)-এর পবিত্রতা ধৈর্যের পূর্ণতা

মিথ্যা অপবাদে জর্জরিত হওয়ার পর কঠিন সময় পার করতে হয়েছিল আয়েশা (রা.)-কে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে তার পবিত্রতা ঘোষণা করেন। এই ঘটনা শেখায় অন্যায়ের অভিযোগ মানুষের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে পারে, কিন্তু আল্লাহর ন্যায় বিচার সর্বশ্রেষ্ঠ।

ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ

কোরআন বলে, “আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ, জীবন ও ফলের ক্ষয় দ্বারা; আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।” (সুরা আল-বাকারা, আয়াত ১৫৫) এই আয়াত মুমিনের জীবনে আশার আলো। প্রতিটি কষ্ট মানুষকে পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর আরও নিকটবর্তী করে।

আল্লাহর পরিকল্পনাই সর্বোত্তম

কোরআনের সব ঘটনাই এক সত্য বার্তা দেয় কষ্ট ব্যর্থতার প্রমাণ নয়; বরং সঠিক পথে থাকার পরীক্ষা। আমরা যখন যেটা চাই, সেটাই সবসময় আমাদের জন্য ভালো হয় না। আল্লাহ জানেন কখন, কীভাবে, কোন জিনিসটি আমাদের জন্য কল্যাণকর।

জীবনের ঝড়ঝাপটা যখন ঘিরে ধরে, তখন কোরআনের গল্পগুলোই হয়ে ওঠে শান্তি, আশা ও ঈমানের শক্তির উৎস। এগুলো শুধু অতীতের ঘটনা নয় আজকের জীবনেরও পথনির্দেশক।