সন্তান শুধু দাম্পত্য জীবনের অংশ নয়; এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি অমূল্য উপহার। প্রত্যেক বাবা-মায়ের অন্তরে থাকে এক গভীর আকাঙ্ক্ষা—তাদের সন্তান হোক ইমানদার, উত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সফল।
নেক সন্তান চাওয়া কেবল ইচ্ছা নয়; এটি আল্লাহর দরবারে দোয়ার মাধ্যমে মুমিনের অন্তরকে নরম করা, তাওয়াক্কুল বাড়ানো এবং নবী ও ওলিদের সুন্নত অনুসরণ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল।
কুরআনে আমরা দেখি, যেসব নবী আল্লাহর কাছে সন্তান চেয়েছেন, তারা কেবল সন্তানই চায়নি, বরং চেয়েছেন সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও আল্লাহভীরু সন্তান। তাই নেক সন্তান চাওয়া হলো সবচেয়ে সুন্দর দোয়াগুলোর একটি। এটি মায়ের গর্ভধারণের আগে, সময়কালে এবং সন্তানের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর স্মরণ করিয়ে দেয়।
হজরত জাকারিয়া (আ.) ছিলেন নিঃসন্তান, কিন্তু তার মনে সন্তান লাভের প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল। আল্লাহর দরবারে তার দোয়া ছিল—
رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً ۖ إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ
‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পবিত্র (নেক) সন্তান দান করো। নিশ্চয়ই তুমি দোয়া শ্রবণকারী।’ (সূরা আল-ইমরান: আয়াত ৩৮)
হজরত ইবরাহিম (আ.)ও আদর্শ সন্তান লাভের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন। তার দোয়া ছিল—
رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ
‘হে আমার রব! আমাকে এক সুপুত্র দান করুন।’
(সূরা সাফফাত: আয়াত ১০০)
একজন মুমিন বান্দা হিসেবে আমরা চাই চরিত্রবান ও আল্লাহভীরু সন্তান। কুরআনে আরও একটি দোয়া রয়েছে—
رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ اَزۡوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّۃَ اَعۡیُنٍ وَّ اجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِیۡنَ اِمَامًا
‘হে আমাদের রব! আমাদের স্ত্রীদের এবং সন্তানদের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদের আল্লাহভীরুদের জন্য আদর্শ বানাও।’
(সূরা ফুরকান: আয়াত ৭৪)
নেক সন্তান লাভের জন্য কিছু উপকারী আমল
- নিষ্ঠা ও তাওয়াক্কুল: দোয়া করার সময় আন্তরিকতা ও বিশ্বাস রাখা।
- সেজদায় দোয়া: নামাজের সেজদায় বেশি বেশি দোয়া করা।
- হালাল আহার ও পরিচ্ছন্নতা: উত্তম রিজিক গ্রহণ ও সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখা।
- দাম্পত্য জীবন: সুন্নাহ অনুযায়ী আচরণ করা।
- নিয়মিত দোয়া: গর্ভধারণের আগে ও পরে নিয়মিত দোয়াগুলো পড়া।
নেক সন্তান কেবল দাম্পত্য জীবনের সৌন্দর্য বাড়ায় না, বরং সমাজ, জাতি ও উম্মাহর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহা নেয়ামত। একটি নেক সন্তান তার বাবা-মায়ের জন্য সাদাকায়ে জারিয়ার দরজা খুলে দেয় এবং প্রতিটি সৎকর্মে অংশীদার হয়ে ওঠে।
আল্লাহর দরবারে বান্দা কখনো খালি হাতে ফিরে যায় না—বিশেষ করে যখন হৃদয়ে মমতার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে হাত তোলে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে নেক, ইমানদার ও সৎ সন্তান দান করুন এবং তাদেরকে দ্বীন ও দুনিয়ার কল্যাণময় পথে পরিচালিত করুন। আমিন।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন