আরও একধাপ এগোল ভারতের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগ। ফ্রান্সের সঙ্গে নতুন একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে যাচ্ছে নয়াদিল্লি, যার মাধ্যমে দেশটিতে আসবে পরবর্তী প্রজন্মের উন্নত ফাইটার জেট বিমানের ইঞ্জিন। সামরিক শক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত শুধু প্রতিরক্ষা দুনিয়ায় নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছে।
বর্তমানে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সব ফাইটার জেট নির্ভর করে বিদেশি ইঞ্জিনের ওপর। ফলে রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামতের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়। সে নির্ভরতা কাটাতেই এবার নিজস্ব পরিকাঠামো গড়ে তুলতে চাইছে নয়াদিল্লি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফরাসি প্রযুক্তিতে তৈরি যুদ্ধবিমানের প্রায় ২৫০টি ইঞ্জিন কিনতে চলেছে ভারত, যার আনুমানিক খরচ ৬১ হাজার কোটি রুপি। এতে ভারতীয় প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হবে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও আধুনিকতা, যা দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পে এক নতুন মাত্রা আনবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এরই মধ্যে সেনাবাহিনীর তিন প্রধানের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন এ নিয়ে। একই সঙ্গে, ভারতের বহুপ্রতীক্ষিত ১১৪টি মাল্টিরোল যুদ্ধবিমানের খোঁজ ও পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামকেও এই চুক্তি নতুন গতি দিতে পারে বলে মত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের।
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ভারতের জন্য এফ-৩৫ জেটের প্রস্তাব এবং রাশিয়ার পক্ষ থেকে এসইউ-৫৭ যৌথ উৎপাদনের প্রস্তাব—উভয়কে ঘিরেই আলোচনার পারদ চড়ছে। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, এফ-৩৫-এর উচ্চ খরচ, রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা এবং দীর্ঘ লজিস্টিক সময়সীমা ভারতকে খুব একটা টানছে না।
এ ছাড়া, ২০২৫ সালের শুরুতে প্রকাশিত মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের রিপোর্টেও বলা হয়, এফ-৩৫ স্টিলথের ফিচারগুলির কার্যকারিতা এখনো পুরোপুরি নিরীক্ষিত নয়, ব্যয়ও বেড়ে গেছে প্রায় দ্বিগুণ।
এমন এক প্রেক্ষাপটে ভারতের ফ্রান্সমুখী পদক্ষেপ একদিকে যেমন বাস্তবিক, অন্যদিকে কৌশলগতও। এই চুক্তি শুধু প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুযোগ নয়, বরং ভারতের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকেও মজবুত করতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :