প্রায় এক দশক ধরে মধ্যপ্রদেশের ভোপালের বুধওয়ারা এলাকায় পরিচিত ছিলেন ‘নেহা কিন্নর’ নামে। লোকে জানত তিনি একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী। কিন্তু সেটি ছিল ভুয়া পরিচয়। তিনি আসলে বাংলাদেশি নাগরিক আব্দুল কালাম। ভুয়া পরিচয়ে ভারতীয় নথিপত্র তৈরি করে তিন দশকের বেশি সময় ধরে ভারতে বসবাস করছিলেন তিনি।
সম্প্রতি ভোপাল পুলিশের গভীর রাতের এক অভিযানে তার প্রকৃত পরিচয় উদ্ঘাটিত হয় এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার (১৯ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ইন্ডিয়া টুডে।
পুলিশ জানায়, মাত্র ১০ বছর বয়সে আব্দুল কালাম অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন এবং মুম্বাইয়ে প্রায় ২০ বছর বসবাস করেন। পরে তিনি ভোপালে চলে আসেন এবং ‘নেহা’ নামে হিজড়া সম্প্রদায়ের একজন সদস্য হিসেবে নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার নারী হিসেবে পরিচয় দেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই পরিচয় তাকে স্থানীয় সমাজে সহজে মিশে যেতে ও প্রশাসনের নজর এড়িয়ে চলতে সাহায্য করেছে।
আব্দুল ভারতীয় নাগরিক হিসেবে জাল আধার কার্ড, ভোটার আইডি ও পাসপোর্ট তৈরি করেন এবং সেই নথি ব্যবহার করে একাধিকবার বাংলাদেশে যাতায়াতও করেছেন। পুলিশ জানায়, তার বিরুদ্ধে সন্দেহ জাগার কোনো সুযোগই ছিল না, কারণ তিনি এসব নথি ব্যবহার করে খুব স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করতেন।
সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা শালিনী দীক্ষিত ইন্ডিয়া টুডে-কে জানান, ‘একজন গোপন তথ্যদাতার মাধ্যমে আমরা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাই। তারপর তার পরিচয় যাচাই করে গ্রেপ্তার করা হয়। সে দীর্ঘদিন ধরে ভোপালে ছিল এবং এর আগে মহারাষ্ট্রে বসবাস করেছিল। তার যাতায়াতের সময় সে জাল ভারতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করেছিল।’
মামলাটি বর্তমানে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর তত্ত্বাবধানে রয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের ওপর এ ঘটনার প্রভাব থাকায় গোয়েন্দা ব্যুরো (আইবি), সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড (এটিএস) এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিট বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞরা আব্দুলের জব্দ করা মোবাইল ফোন, কল লগসহ অন্যান্য ডিজিটাল তথ্য বিশ্লেষণ করছেন। একই সঙ্গে, তার ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় আসল কি না তা যাচাই করতে পুলিশ লিঙ্গ-পরীক্ষা করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
আব্দুল বর্তমানে তালাইয়া থানায় উচ্চ নিরাপত্তায় ৩০ দিনের পুলিশ হেফাজতে আছেন। সেখানে কেবল স্টেশন ইনচার্জ ও দুজন মনোনীত নারী পুলিশ কর্মকর্তারই তার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি রয়েছে। তার গ্রেপ্তারের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। মামলার তদন্ত এখনও চলমান।
আপনার মতামত লিখুন :