বাণিজ্য চুক্তি এখনো অধরা থাকা সত্ত্বেও, মার্কিন ও ভারতীয় কর্মকর্তারা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মেরামতের জন্য আলোচনার মাধ্যমে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। চলিত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে দুই পৃথক মার্কিন প্রতিনিধি দল ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
মার্কিন দূতাবাসের বরাত দিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যালিসন হুকার ৭ থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নয়াদিল্লি সফরে থাকবেন। এই সফরের সময় তিনি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
অন্যদিকে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি, উপ-উপস্থাপিকা রিক সুইটজারের নেতৃত্বে একটি পৃথক প্রতিনিধি দল আজ মঙ্গলবার ভারত সফরে আসবেন।
নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই আলোচনার ফলে কোনো তাৎক্ষণিক বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা আশা করা যায় না। তবে বৈঠকগুলি ইঙ্গিত দেয় যে উভয় পক্ষ যোগাযোগ চ্যানেল খোলা রাখছে এবং বৃহত্তর সম্পর্ককে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে। আলোচনাগুলো ব্যক্তিগত হওয়ায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মকর্তারা তথ্য প্রদান করেছেন।
ট্রাম্পের শুল্ক চাপ এবং ভারতের প্রতিক্রিয়া
আগস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্য বাধা সৃষ্টি ও ভারতের রাশিয়ান তেল কেনার প্রক্রিয়াকে শাস্তি প্রদান। শুল্ক আরোপের পর মার্কিন প্রশাসন রাশিয়ার দুটি বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারীকে অনুমোদন দেয়, ফলে ভারতের পরিশোধকদের বিকল্প তেলের উৎস খুঁজতে হয়।
যদিও পরে ট্রাম্প শুল্ক কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি ভারতের বাণিজ্য অনুশীলনের সমালোচনা অব্যাহত রেখেছেন। নভেম্বরে ট্রাম্প বলেছেন, ‘কোনো এক সময়ে’ শুল্ক কমানো সম্ভব।
এদিকে গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসে তিনি আরও ইঙ্গিত দেন, ভারতীয় চাল মার্কিন বাজারে ডাম্পিং করলে তিনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। তাদের ডাম্পিং করা উচিত নয়। আমি এটা শুনেছি, অন্যদের কাছ থেকেও শুনেছি। এটি করা যাবে না।’
পুতিনের ভারত সফর
ট্রাম্পের শুল্ক চাপ সত্ত্বেও, গত সপ্তাহে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ভারতের উচ্চ-প্রোফাইল সফর সম্পন্ন করেছেন। সফরের কয়েক দিনের মধ্যেই মার্কিন প্রতিনিধি দলের ভারত সফর শুরু হয়েছে। এই সফরকে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারতের বাণিজ্য সচিব জানিয়েছেন, তিনি আশাবাদী যে বছরের শেষের আগে দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির প্রথম ধাপ চূড়ান্ত হতে পারে। প্রথম ধাপে শুল্ক হারসহ অন্যান্য প্রাথমিক শর্তাদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে, মন্ত্রণালয়গুলো তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি।
নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা জানান, দুই দেশ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সেপ্টেম্বরে আলাস্কায় বার্ষিক সামরিক মহড়া, আগস্টে মার্কিন-ভারত ২+২ আন্তঃসম্পর্কীয় সংলাপ, গত সপ্তাহে সন্ত্রাস দমনকারী যৌথ কর্মী গোষ্ঠীর বৈঠক।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েক মাসের উত্তেজনার পরও উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে স্বাভাবিক ও সমান অবস্থানে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়ান স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং অধ্যাপক সি. রাজা মোহন বলেছেন, ‘উভয় পক্ষই সম্পর্ক যেখানে ছিল সেখান থেকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। শুল্ক আরোপের পরও উচ্চ-স্তরের টেকসই আলোচনা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, এই আলোচনা দেখায় যে দুই দেশ বর্তমান বাধাগুলো কাটিয়ে উঠার জন্য কাজ করছে।
অতীত ও উত্তেজনা
মে মাসে চার দিনের সংঘাতের সময় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করতে ট্রাম্পের দাবি এবং বাণিজ্যকে দর কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার কারণে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক তিক্ত হয়। তবে নয়াদিল্লি বারবার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
নয়াদিল্লি-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেছেন, ‘রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর আরোপিত ২৫ শতাংশ জরিমানা শুল্ক প্রত্যাহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সদিচ্ছা দেখাতে পারে। এটি হতে পারে বাণিজ্য চুক্তির পরবর্তী পদক্ষেপ।’

