জাপানের আওমোরি প্রিফেকচারের পূর্ব উপকূলে গতকাল সোমবার রাত ১১টা ১৫ মিনিটে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভূমিকম্পের পর বিভিন্ন স্থানে আগুন লাগা, ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ভূমিকম্পের জেরে হোক্কাইডো ও আওমোরি উপকূলজুড়ে সুনামি সতর্কতা জারি করা হলেও আজ মঙ্গলবার (০৯ ডিসেম্বর) সকালেই তা প্রত্যাহার করা হয়।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত একজন গুরুতরসহ ৩০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে। আরও নয়টি ঘটনার তীব্রতা যাচাই চলছে। ভূমিকম্পের পর সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে আওমোরি ও হোক্কাইডোসহ পাঁচটি প্রিফেকচারে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যা মঙ্গলবার সকালে তুলে নেওয়া হয়।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে প্রায় ৪ হাজার ৩০০ পরিবার বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়লেও পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে আওমোরির প্রায় ১০০টি বাড়িতে এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে। শিন-আওমোরি থেকে মোরিওকা পর্যন্ত তোহোকু শিনকানসেন ট্রেন চলাচলও পুনরায় স্বাভাবিক করা হয়েছে।
জাপান আবহাওয়া সংস্থা জানায়, আওমোরির হাচিনোহে শহরে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল জাপানি শিন্ডো স্কেলে ৬+। স্থানীয়দের অনেকেই এটিকে তাদের জীবনের সবচেয়ে তীব্র ও নিকটবর্তী ভূমিকম্প হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ভূমিকম্পের দীর্ঘ সময় স্থায়ী হওয়ায় অনেকের মধ্যে উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে।
হোক্কাইডোর আরও উত্তরের এলাকাগুলোতেও ভূকম্পন অনুভূত হয়। বরফাচ্ছন্ন রাস্তায় আফটারশকের সময় দ্রুত সরতে না পারার ঝুঁকি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকালে এই ধরনের দুর্যোগ মানুষের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে, কারণ এসময় আগুন লাগার ঝুঁকিও বেশি থাকে।
জেএমএ সতর্ক করে জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হোক্কাইডো থেকে সানরিকু উপকূল পর্যন্ত আরও বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা যেখানে ০ দশমিক ১ শতাংশ প্রথম ভূমিকম্পের পর সেই ঝুঁকি এক সপ্তাহের জন্য বেড়ে ১ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এরই মধ্যে শিন্ডো ১-এর বেশি মাত্রার মোট ১৫টি আফটারশক রেকর্ড করা হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় আওমোরিতে সরকারিভাবে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানো হয়েছে। টোকিও, সাইতামা, চিবা ও কানাগাওয়াসহ কান্তো অঞ্চলেও দীর্ঘমেয়াদী ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে, এর ফলে উচ্চ ভবনগুলো দুলে ওঠে।
সরকার জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং দুর্যোগের সময় করণীয় সম্পর্কে প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়েছে, বিশেষ করে আফটারশকের সম্ভাবনা মাথায় রেখে।
সূত্র: জাপান টাইমস

