ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫

ইরানের বিরুদ্ধে ‘ক্লাস্টার বোমা’ ব্যবহারের অভিযোগ ইসরায়েলের

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৫, ১২:০৪ পিএম
ক্লাস্টার বোমা। ছবি- সংগৃহীত

ইসরায়েলের হামলার জবাবে আকাশ প্রতিরক্ষা গুঁড়িয়ে দিয়ে  দেশটির মূল ভূখণ্ডে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইরান। এসব হামলায় রীতিমত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা। এই সংঘাতে ইরান   প্রাণঘাতী অস্ত্র ‘ক্লাস্টার বোমা’ ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে ইসরায়েল।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। 

ইসরায়েলের অভিযোগ, ইরান যেসব প্রাণঘাতী বোমা ব্যবহার করেছে, তা বেসামরিক মানুষের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচিত, কারণ যুদ্ধ শেষ হওয়ার বহু পরেও এগুলো বিস্ফোরিত না হয়ে মাটির নিচে থেকে যেতে পারে। 

দেশটি দাবি করেছে, ইরান অন্তত একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে যা আকাশে বিস্ফোরিত হয়ে ছোট ছোট বোমা ছড়িয়ে দেয়-এর উদ্দেশ্য ছিল বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি বাড়ানো। 

তবে এ বিষয়ে তেহরানের মন্তব্য নিতে ব্যর্থ হয় সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।

ক্লাস্টার বোমা কী?

ক্লাস্টার বোমা এক ধরনের বিস্ফোরক অস্ত্র, যা আকাশ থেকে ফেলা হয় এবং আঘাত হানার আগে বাতাসেই খুলে যায়। এরপর এর ভেতরে থাকা অনেকগুলো ছোট ছোট  সাব-মিউনিশন বা বোম্বলেট চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিস্ফোরিত হয়।

এই ছোট ছোট বোমাগুলো একটা বড় এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে গিয়ে ধ্বংস, হতাহত এবং আতঙ্ক তৈরি করে। তবে বড় বিপদ হলো— এদের মধ্যে অনেকগুলো তৎক্ষণাৎ বিস্ফোরিত হয় না, মাটিতে বা ভবনের ধ্বংসস্তূপে থেকে যায়। পরে কোনো সাধারণ মানুষের পায়ে বা হাতের ছোঁয়ায় এগুলো বিস্ফোরিত হয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটায়।

একটি সাধারণ ক্লাস্টার বোমার মধ্যে থাকতে পারে ১০০ থেকে ২০০টিরও বেশি ক্ষুদ্র বিস্ফোরক। এগুলো বিস্ফোরিত হলে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে লোহার টুকরো, যা ৩০০-৪০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে সব কিছুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সামরিক কৌশলে বলা হয় এটি শত্রুর সরঞ্জাম, যানবাহন বা সৈন্যদের ছত্রভঙ্গ করতে সক্ষম। তবে বাস্তবে এগুলোর আঘাতের নির্ধারিত সীমা নেই শিশু, বৃদ্ধ কিংবা সাধারণ মানুষও সহজে এতে হতাহত হয়।

এ বোমার বিশেষ উদ্বেগের জায়গা হলো, ক্লাস্টার বোমার অনেক সাবমিউনিশন তাৎক্ষণিকভাবে বিস্ফোরিত হয় না। একে বলা হয় ডাড বা অবিস্ফোরিত বোমা, যা মাটিতে বা গাছপালার মধ্যে থেকে যায় বছরের পর বছর। এগুলো পরে কোনো সাধারণ মানুষের পায়ের ধাক্কায় বা শিশুর স্পর্শে বিস্ফোরিত হয়ে প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ, লাওস, লেবানন, সিরিয়া কিংবা ইউক্রেন এসব অঞ্চলে আজও অবিস্ফোরিত ক্লাস্টার বোমার কারণে নতুন নতুন হতাহতের ঘটনা ঘটে চলেছে।

২০০৮ সালে কনভেনশন অন ক্লাস্টার মিউনিশনস (সিসিএম) নামে এক আন্তর্জাতিক চুক্তি গৃহীত হয়, যেখানে ১১০টির বেশি দেশ ক্লাস্টার বোমা নিষিদ্ধ করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনসহ বেশ কয়েকটি বড় সামরিক শক্তি এই চুক্তিতে সই করেনি এবং এখনও এ ধরনের অস্ত্রের মজুদ রাখছে ও ব্যবহার করছে।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বহু সংস্থা ক্লাস্টার বোমার বিরুদ্ধে সোচ্চার। কারণ এ বোমা যুদ্ধ শেষ হওয়ার বহু বছর পরও সাধারণ মানুষের জীবনে ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনে।