ঢাকা বুধবার, ১১ জুন, ২০২৫

ফেসবুক পোস্টে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা জাবি ছাত্রদলের বহিষ্কৃত নেতার

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২৫, ১১:৪৭ এএম
নিশাত আব্দুল্লাহ। ছবি-সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রদলের বহিষ্কৃত নেতা নিশাত আব্দুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। রোববার (৮ জুন) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে তিনি লেখেন, ‘আমি নিশাত আব্দুল্লাহ, আজ ৯ জুন ছাত্ররাজনীতি থেকে সম্পূর্ণভাবে বিদায় নিচ্ছি। এখন থেকে ছাত্রদল বা বিএনপির কোনো ইতিবাচক বা নেতিবাচক কার্যকলাপে আমার কোনো ভূমিকা বা দায় থাকবে না।’

নিশাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য ছিলেন।

নিশাতের স্ট্যাটাসের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রদলের অনেক বর্তমান ও সাবেক নেতা-কর্মী হতাশা প্রকাশ করেন। তাদের ভাষায়, ‘দুঃসময়ে রাজপথের সৈনিক’কে হারানো ছাত্রদলের রাজনৈতিক ব্যর্থতার প্রতিফলন।

নিশাতের স্ট্যাটাসে অনেকে মন্তব্য লেখেন, ‘তার মতো সাহসী এবং আদর্শনিষ্ঠ ছাত্রনেতার এভাবে সরে যাওয়া দলীয় রাজনীতির প্রতি একধরনের অনাস্থা প্রকাশ করে।’

ছাত্রদল নেতা রাজু হাসান রাজন ফেসবুকে লেখেন, ‘৫ আগস্টের আগে রাজপথে গুটিকয়েক যারা মিছিল করতেন, নিশাত তাদের একজন। যিনি দলকে ভালোবেসে কাজ করেছেন, তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে কিছু স্বার্থান্বেষী। আজকের এই বিদায় আমাদের লজ্জিত করে।’

জাবি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শিহাব উদ্দীন ফেসবুকে লেখেন, ‘২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যখন জাবি ছাত্রদলের অস্তিত্ব ছিল প্রশ্নবিদ্ধ, তখন মাত্র ৫-৭ জন নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মানববন্ধন কিংবা কর্মসূচি আয়োজন করতেন যারা, নিশাত ভাই ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। কোনো লোভ বা রাজনৈতিক সুবিধা ছাড়া দলকে ভালোবেসে কাজ করেছেন। আজ তিনিই অবমূল্যায়নের শিকার।’

শিক্ষার্থী শোয়াইব হাসান মন্তব্য করেন, ‘যখন ছাত্রদল জাহাঙ্গীরনগরের ক্যাম্পাসে কার্যত অস্তিত্বহীন, তখন নিশাত ভাই একাই সংগঠনের পতাকা বহন করেছেন। আজ স্বৈরাচার পতনের পর এমন প্রস্থান মেনে নেওয়া কষ্টকর।’

আরেক নেত্রী সুসমিতা বিনতে লেখেন, ‘আপনার মত ত্যাগী নেতার আজকের প্রস্থান কষ্টের। আবার চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেন ভাই।’

নিশাতকে ‘বহিষ্কারের’ কারণ

২০২৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নিশাত আব্দুল্লাহকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক ঘোষিত জাবি ছাত্রদলের নতুন আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনার পর নিশাতসহ আরও দু’জনকে বহিষ্কার করা হয়।

জানা গেছে, কমিটি ঘোষণার পর ১৭৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির বৈঠকে পদবঞ্চিতদের ক্ষোভে মিলনায়তনে হট্টগোল, চিৎকার ও কক্ষের জানালার কাঁচ ভাঙার ঘটনা ঘটে। এরপরই সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় নিশাত আব্দুল্লাহ, শামসুজ্জামান সায়েম ও হাসিব বিন আব্দুল হাইকে।

ফেসবুকে দেওয়া পোস্টের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে নিশাত গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা পারিবারিকভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। স্বৈরাচার আমলে লড়াই করার মানসিকতা নিয়েই ছাত্রদলে এসেছিলাম। কিন্তু বর্তমান ছাত্রদলের মধ্যে যে গুণগত পরিবর্তন প্রত্যাশা করেছিলাম, তা দেখছি না। আজও গ্রুপিং, অযোগ্য নেতৃত্ব, দলীয় আদর্শের অবক্ষয়—সবই চলছে। এ দলীয় পরিবেশে নিজের অবস্থান আর মানিয়ে নিতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বহিষ্কারের ঘটনাও ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যারা যুক্তিতর্ক বোঝে না, যারা রাজনৈতিক চিন্তা ও কৌশল থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, তাদের হাতে আজ সংগঠন চলে গেছে। এই পরিবেশে রাজনীতি করে নিজের চিন্তাশীলতা বিসর্জন দেওয়া সম্ভব নয়।’

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ‘সে তো বহিষ্কৃত, তাই তার বিষয়ে আমরা কিছু ভাবছি না।’