ঢাকা সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মানবজাতির বিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে চমকে দেওয়ার মতো তথ্য

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৫, ০১:৫৯ এএম

চীনে পাওয়া গেছে ১০ লাখ বছরের পুরোনো একটি মাথার খুলি। আধুনিক মানুষের প্রজাতি হোমো সেপিয়েন্সদের অস্তিত্ব নিয়ে নতুন এক দাবি করেছেন গবেষকেরা। তারা বলছেন, আগে যেমনটা ধারণা করা হয়েছিল, তার চেয়ে অন্তত পাঁচ লাখ বছর বেশি সময় আগে থেকেই পৃথিবীতে হোমো সেপিয়েন্সদের অস্তিত্ব ছিল। চীনে পাওয়া ১০ লাখ বছরের পুরোনো একটি মাথার খুলি নিয়ে বিশ্লেষণ করার পর এমন দাবি করেছেন গবেষকেরা। গবেষকেরা বলছেন, এই বিশ্লেষণ মানুষের বিবর্তন সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। আর তা যদি ঠিক হয়, তবে মানবপ্রজাতির ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়কেই নতুন করে লিখতে হবে। তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, নতুন গবেষণার ফলাফল সত্যি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে তা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আরও অনেক দূর যেতে হবে। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘সায়েন্স’-এর গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের বিজ্ঞানীরাসহ আরও বেশ কয়েকজন গবেষক এ দলে ছিলেন। ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিজুন নি যৌথভাবে এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।

গবেষণার শুরুর দিকে পাওয়া ফলাফল দেখে গবেষকেরা নিজেরাও হতবাক হয়েছিলেন। ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিজুন নি বলেন, ‘গবেষণায় এ ধরনের ফলাফল পাওয়ার পর শুরুতেই আমাদের কাছে এটিকে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল। ভাবছিলাম, কীভাবে এটা এতটা আগের ঘটনা হতে পারে? আমরা সব মডেল আর পদ্ধতি ব্যবহার করে এটির ওপর বারবার পরীক্ষা চালিয়েছি। এখন আমরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত। আর আমরা সত্যিই খুব উচ্ছ্বসিত।’ পুরোনো ওই খুলির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইউনসিয়ান ২’। খুলিটি আবিষ্কারের পর শুরুতে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, এটি প্রাচীনকালের হোমো ইরেকটাস প্রজাতির কোনো মানুষের খুলি হয়তো। হোমো ইরেকটাস হলো প্রথম লম্বা মস্তিষ্কের মানুষ প্রজাতি। হোমো ইরেকটাস প্রজাতি প্রায় ছয় লাখ বছর আগে ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়ে আলাদা দুটি প্রজাতিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সে দুটি প্রজাতি হলো নিয়ান্ডারথাল ও আধুনিক মানুষের প্রজাতি হোমো সেপিয়েন্স। তবে মাথার খুলিটি নিয়ে নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, এটি হোমো লংগির একটি আদিম রূপ। হোমো লংগি হলো নিয়ান্ডারথাল আর হোমো সেপিয়েন্সের সমপর্যায়ের একটি ঘনিষ্ঠ প্রজাতি। পুরোনো ওই খুলির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইউনসিয়ান ২’। খুলিটি আবিষ্কারের পর শুরুতে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, এটি প্রাচীনকালের হোমো ইরেকটাস প্রজাতির কোনো মানুষের খুলি। হোমো ইরেকটাস হলো প্রথম লম্বা মস্তিষ্কের মানুষ প্রজাতি। গবেষণার সহপ্রধান এবং ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের অধ্যাপক ক্রিস স্ট্রিংগার বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও ১০ লাখ বছর বয়সী হোমো সেপিয়েন্সের জীবাশ্ম থাকতে পারে, আমরা এখনো এমনটা খুঁজে পাইনি।’ আদিম মানুষের প্রজাতি চিহ্নিত করা এবং তারা কখন পৃথিবীর বুকে পা রেখেছিল, তা বোঝার দুটি উপায় আছে। তা হলো মস্তিষ্কের আকার দেখা এবং জিনগত তথ্য বিশ্লেষণ করা। ইউনসিয়ান ২-এর ক্ষেত্রে দুই পদ্ধতিই ব্যবহার করা হয়েছে। আর দুই পরীক্ষাতেই একই ধরনের ফলাফল পাওয়া গেছে।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনতত্ত্ববিদ আয়লয়েইন স্ক্যালি বলেন, দুটি পদ্ধতিতেই যথেষ্ট অনিশ্চয়তা আছে। তাঁর মতে, সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেক সতর্ক থাকতে হয়। কারণ, এটি নির্ণয় করা খুবই কঠিনÍচাই সেটা জিনগত প্রমাণ বা জীবাশ্ম প্রমাণ।আদিম মানুষের প্রজাতি চিহ্নিত করা এবং তারা কখন পৃথিবীর বুকে পা রেখেছিল, তা বোঝার দুটি উপায় আছে। তা হলো মস্তিষ্কের আকার দেখা এবং জিনগত তথ্য বিশ্লেষণ করা। ইউনসিয়ান ২-এর ক্ষেত্রে দুই পদ্ধতিই ব্যবহার করা হয়েছে। আর দুই পরীক্ষাতেই একই ধরনের ফলাফল পাওয়া গেছে। স্ক্যালি আরও বলেন, ‘বিপুল পরিমাণে জিনগত তথ্য থাকলেও এই জনগোষ্ঠী কখন একসঙ্গে বসবাস করেছিল, তা এক লাখ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময়ের মধ্যে নির্ধারণ করাও খুব কঠিন।